পুলিশের উপস্থিতিতে পালানোর ভিডিও ভাইরাল ক্যাসিনোপাড়ার শতাধিক বিদেশি লাপাত্তা

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকা: ঢাকার ক্যাসিনোপাড়ায় র‌্যাবের হানার পর থেকে অন্তত শতাধিক নেপালি নাগরিক লাপাত্তা। তারা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় সহযোগিতা করতেন। কেউ কেউ আবার ক্যাসিনোতে মালিকানায় ছিলেন। বুধবার র‌্যাব মতিঝিল এলাকার কয়েকটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর থেকে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরতে হন্য হয়ে খুঁজছেন কিন্তু কিছুতেই তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অভিযানের পরপরই তারা পালিয়ে গেছে। র‌্যাবের একটি সূত্র বলছে, নেপালি নাগরিকদের ভারতে যেতে কোন ভিসা লাগে না। তাই তারা সীমান্ত দিয়ে হয়তো ভারত হয়ে নেপালে চলে গেছে। তবে ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার বিস্তারে নেপালিদের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদেরকে আটকের চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। কারণ ক্যাসিনো নিয়ে তাদের কাছে অনেক তথ্যই হয়তো আছে।

এদিকে, বুধবার মতিঝিলের ক্যাসিনো পাড়ায় অভিযানের রাতে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সেগুনবাগিচার একটি বাসা থেকে বেশ কয়েকজন নেপালি নাগরিককে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই বাড়ির সিসি টিভির দুটি ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়েছে। একটি দৈনিক পত্রিকায় এরকম রিপোর্ট প্রকাশের পর পুলিশ সদরদপ্তর, ডিএমপি হেডকোয়াটার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, সেগুনবাগিচার ৬/৬ নম্বর বাসা থেকে রাত ১টা ৪৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড ওই বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যান প্রথমে চারজন ব্যক্তি। কয়েক সেকেন্ড পরে বের হন আরও চারজন। এরপর বের হন আরও চারজন এবং সবশেষে বের হন তিন। এই নিয়ে মোট ১৫ জন নেপালি নাগরিক ওই রাতে পালিয়ে যায়। তারা ওই বাসার ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। এর আগে রাত ১১টা ২৮ মিনিট ১৫ সেকেন্ড ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান আরও তিন ব্যক্তি। পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বাসায় প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই বাসার কেয়ারটেকার। ভেতরে প্রবেশ করে তারা বিদেশী নাগরিকের ফ্ল্যাটে যাওয়ার কথা বলেন। বাসায় প্রবেশ করার সময় তাদের মোটরসাইকেল ওই বাসা থেকে অনেকটা দুরে রাখেন এবং তাদের হাতে কিছু ছিল না। কিন্তু বের হয়ে যাবার সময় তাদের হাতে একটি ব্যাগ ছিল।

সেগুন বাগিচার ওই বাসাটি বেশ আগে মাছুম নামের এক ব্যক্তি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নেন। কথা হয় তখন পরিবার নিয়ে কয়েকজন বিদেশী নাগরিক থাকবেন। কিন্তু কয়েকমাস তারা ব্যাচেলর থাকলেও তাদের পরিবার আর আসে নাই। সন্দেহজনক হওয়াতে বিষয়টি ফ্ল্যাট কর্তৃপক্ষ রমনা থানা পুলিশকে অবগত করেছিলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৬০টির মত ক্লাবে ক্যাসিনো চলত। এসব ক্যাসোনি পরিচালনার জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষ ক্যাসিনো পরিচালনায় পারদর্শী নেপালি নাগরিকদের নিয়ে আসত। হিমালয়ের দেশ হিসাবে খ্যাত নেপাল ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য খুবই প্রিয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ যেখানে বৈধভাবে ক্যাসিনো চলে। নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে ৯টি ও বাইরে আরও ২টি ক্যাসিনো পরিচালনা করা হয়। তাই নেপালিরা ক্যাসিনো পরিচালনায় খুবই দক্ষ। তাই ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব নেপালিদের সহযোগীতা নিতেন।

সূত্র বলছে, ঢাকায় নেপালি নাগরিক দীনেশ ও রাজকুমারের হাত ধরেই ক্যাসিনো ব্যবসার শুরু হয়। বিশেষ করে ঢাকার যুবলীগ দক্ষিণের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এই নেপালিদের ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য নিয়ে আসেনি। ক্যাসিনোতে বাংলাদেশীদের আগ্রহ দেখে নেপালিরা একের পর এক ক্যাসিনোতে যুক্ত হয়।
ভিজিট ভিসা নিয়ে নেপালি কর্মীরা ঢাকায় আসতেন। উচ্চ বেতনে তারা ক্যাসিনোতে কাজ করতেন। আবার অনেক নেপালি ক্যাসিনোতে শেয়ারে কাজ করতেন। তারা তাদের পেমেন্ট নিতেন ডলারে। গোয়েন্দাসূত্র বলছে, ঢাকার ক্যাসিনোতে কাজ করে নেপালি নাগরিকরা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার ক্যাসিনো পরিচালনা হত এমন বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, ভিক্টোরিয়া ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, সৈনিক ক্লাব, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, ফুয়াং ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্রিড়া চক্র, ইয়ংমেন্স ক্লাব, এজাক্স ক্লাব।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লে কর্ণেল শাফিউল্লাহ বুলবুল মানবজমিনকে বলেন, বুধবারের অভিযানের পর আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি, মতিঝিলের চারটি ক্যাসিনোতে অন্তত ১৬ জন নেপালি কাজ করত। তাদের কাউকেই আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। অভিযানের খবর পেয়েই তারা পালিয়ে গেছে। নেপালিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেপালিদের একটা সুবিধা আছে তাদের ভারতীয় ভিসা লাগে না। বুড়িমারি হয়ে খুব সহজেই ভারতে চলে যেতে পারে। আর ভারত থেকে নেপালে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। তারা যদি এই পথ অবলম্বন করে তাহলে হয়তো চলে গেছে। কিন্তু ক্যাসিনোতে নেপালিদের সম্পৃক্ততা জানার পর থেকেই আমরা তাদের ওপর নজরদারি রেখেছি। আমাদের গোয়েন্দারা তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ওই দিন আমরা কিছু বাংলাদেশি নারীদের আটক করেছিলাম। নেপালিরা ট্রেনিং দিয়ে এই নারীদের দক্ষ করে তুলেছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *