ঢাকা: পাবনায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে থানার ভেতরেই অভিযুক্ত ধর্ষকের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয় তার দিকে নজর রাখছেন আদালত। আদালত বলেছেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আগে দেখি, প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয়।
পাবনায় থানার মধ্যে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আজ বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনার পর আদালত ওই মন্তব্য করেন।
বুধবার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল, ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা ও অ্যাডভোকেট রোহানী সিদ্দিকা।
পাবনায় ধর্ষণ ও বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আজ আদালতের তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল। তিনি আদালতে বলেন, গণধর্ষণের শিকার এক নারীকে ধর্ষণের মূল হোতার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন ওসি নিজে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেখানে অপরাধীকে ধরার কথা। সেখানে উল্টো ঘটনা ঘটেছে। তাই ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে এসেছি।
এ সময় আদালত বলেন, প্রশাসনতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। টিভিতে দেখলাম মূল অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ওসিকেও শোকজ করা হয়েছে।
আইনজীবী বলেন, ওসিকে শোকজ করা হয়েছে ঠিক। কিন্তু পত্রিকায় দেখেছি, ভিকটিম ও বিয়ে পড়াতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে কাজীকে ওসির লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এটা সত্য হলে তাতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।
এ সময় আদালত বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আগে দেখি, প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয়। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তখন আসবেন। তখন দেখবো।
পাবনায় গণ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে থানার মধ্যে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে থানার ভেতরে অভিযুক্ত এক ধর্ষকের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হকের বিরুদ্ধে।
বলা হচ্ছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পাবনা সদর থানায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনায় তারা মামলা করতে চাইলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে মামলা না নিয়ে ওসি উল্টো স্বামীকে তালাক দিয়ে ধর্ষক রাসেল আহমেদের সঙ্গে গৃহবধূকে জোর করে বিয়ে দেন। পুলিশ অভিযুক্ত ধর্ষকের সঙ্গে গৃহবধূর বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করলেও তা থানার মধ্যে ঘটেনি বলে দাবি করছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ চার সহযোগীকে নিয়ে তিন সন্তানের জননীকে অপহরণ করে। তাকে চার দিন অজ্ঞাত একটি জায়গায় আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে অপহরণকারীরা। পরে তিনি (গৃহবধূ) কৌশলে পালিয়ে এসে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তিনি (গৃহবধূ) নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ধর্ষক রাসেলকে আটক করে। তবে বিষয়টি মামলা হিসেবে এজাহারভূক্ত না করে পুলিশ তাকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে অভিযুক্ত রাসেলকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হন।