ছিনতাইকারী থামিয়ে দিল এইচএসসি পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন!

Slider বিচিত্র


রিনা ত্রিপুরা, বয়স ২০। খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকায় আসেন শুধু একটি স্বপ্ন নিয়ে—এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করবেন, জীবনে স্বাবলম্বী হবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। স্বপ্নবাজ এই তরুণীর জীবনটাই এখন সংকটাপন্ন।

রাজধানীর কলাবাগানের মেহেরুন্নেসা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন রিনা ত্রিপুরা। সেবার একটি বিষয়ে ফেল করেছিলেন তিনি। তাই নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে আবার বসতে যাচ্ছিলেন ফেল করা বিষয়ের (ICT) পরীক্ষায়।

কিন্তু হঠাৎ ঝড়ের মতো তার সব স্বপ্ন ও পরিকল্পনা উড়ে গেল। এখন তার সময় কাটছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডে। চোখে তার ভয় আর অনিশ্চয়তা; মুখে অসহনীয় কষ্টের ছাপ। সবার কাছে তার একটাই প্রশ্ন—আমার কী দোষ ছিল?

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে পাঁচটা। কলাবাগান থানার নর্থ সার্কুলার রোডের ৫৪/১ বাসার সামনে ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিনা ত্রিপুরাকে বহনকারী রিকশার সামনে আসে দুই ছিনতাইকারী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় দুর্বৃত্তরা। নিয়ে যায় ব্যাগ, মোবাইল ও পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড। পরে তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন রিনা ত্রিপুরা। হাতে স্যালাইন, মাথায়-ঘাড়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে আছেন বিছানায়। কোনোমতে চোখ মেলে সবার কথায় সায় দিচ্ছেন। দু’চোখ দিয়ে অনবরত ঝরছে পানি।

রিনার শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে, দেওয়া হয়েছে রক্তও। পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছে না। রিনার পায়ের কাছে বসে একজন পা টিপে দিচ্ছেন। মাথায় ও ঘাড়ে আঘাতের কারণে বিছানা থেকে উঠতেই পারছেন না রিনা। যে হাত দিয়ে রিনা লিখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন, সেখানেও ছিনতাইকারীরা কুপিয়ে জখম করেছে।

রিনার ভাই জুয়েল ত্রিপুরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার বোন শুধু পরীক্ষা দিতে এসেছিল। এখন সে কথাই বলতে পারছে না। ছিনতাইকারীরা তার অ্যাডমিট কার্ডও নিয়ে গেছে—এখন সে পরীক্ষা দেবে কীভাবে?’

তার ভাই জানালেন, রিনা হোস্টেলে থাকতেন। অনেক স্বপ্ন ছিল তার। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন, পরিবারকে সাপোর্ট করবেন। এখন সেই মেয়েটি শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়; চোখে শুধু ভয় আর কান্না। এ দৃশ্য দেখাও কষ্টের।

হাসপাতালের বিছানায় রিনা ত্রিপুরার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কী ঘটেছিল তখন। তিনি জানান, ‘ভোরে আমি খাগড়াছড়ি থেকে কলাবাগানে এসে নামি। তারপর রিকশা নিয়ে আমার হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিলাম। হোস্টেলের সামনেই দুই যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে রিকশাটিকে থামায়। এরপর আমাকে কুপিয়ে আমার মোবাইল, ব্যাগ ও অ্যাডমিট কার্ড সব নিয়ে যায়।’ আর কিছু বলতে পারেননি রিনা, দু’চোখ বেয়ে কান্না নেমে আসে তার।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মাথায় ও ডান কাঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। সেখানে তার অপারেশন করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

এ ঘটনার বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে আশিক জানান, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি।’

রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। আমরা ঘটনাস্থল শনাক্ত করেছি এবং আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে, আশা করি খুব দ্রুতই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *