ফেলের ভয় দেখিয়ে ৫ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

Slider জাতীয় শিক্ষা


লক্ষ্মীপুর: খাতায় নম্বার বেশি ও পরীক্ষায় ফেল করে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫ শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠেছে লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।

তবে এসব বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে অভিভাবকদের নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহাবুবুর রশিদ তালুকদার। ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারকে ছুটিতে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকার দীর্ঘদিন ধরে ৯ম ও ১০ম (ভোকেশনাল) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের সামনের একটি ঘরে প্রাইভেট পড়াতেন। এ সুযোগে প্রায়ই শিক্ষার্থীদেরকে যৌন নিপীড়ন করতেন।

সম্প্রতি নবম শ্রেণির ৫ শিক্ষার্থীকে আলাদা আলাদাভাবে ওই ঘরে যৌন নিপীড়ন চালান শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকার। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারের বিচার চেয়ে ২১শে আগস্ট অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিন প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ মো. মির্জা ফিরোজ হাসানকে প্রধানকে করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, প্রতিষ্ঠানের চীফ ইনস্ট্রাক্টর (ইলেকট্রনিক্স) মো. আরিফুর রহমান ও লাভলী ত্রিপুরা। ওই কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে ওই শিক্ষার্থীরা। ছেড়ে দিয়েছে লেখাপড়া ও খাওয়া-দাওয়া। ইতিমধ্যে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। দ্রুত অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহাবুবুর রশিদ তালুকদার। এছাড়া অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে আনা লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এর আগে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শামীম হোসেন ও আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারীর অভিযোগ ওঠে। তখনকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান কোন ব্যবস্থা না নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে সহায়তার করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ প্রতিষ্ঠানে একের পর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠায় শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের মধ্যে দেখা দিয়েছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি তাদের।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন চন্দ্র ঘটনাটি অস্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ও তদন্ত কমিটির কোন সদস্য কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে অভিযোগ তুলে নিতে কোন চাপ দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ মির্জা ফিরোজ হাসান।

এদিকে, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল জানান, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৫ শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পেলে শাস্তি পেতে হবে ওই শিক্ষককে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *