ঢাকা: বিমান দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রেখে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ‘অকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিয়ল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন ২০১৯’-এর খসড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দিলে সংশ্লিষ্ট বিমান কর্তৃপক্ষের জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আমাদের যে উড়োজাহাজ ব্যবস্থাপনা তা আন্তর্জাতিক অনেকগুলো সংস্থার বিভিন্ন কনভেনশন ও প্রটোকলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। মন্ট্রিল কনভেনশন হলো বিশেষত যাত্রীদের অধিকার সম্পর্কে। বিমানে আরোহণকারী যাত্রীর মালামাল পরিবহন, মৃত্যুর কারণ ও যাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হলো সেই ব্যবস্থা। এগুলো মন্ট্রিল কনভেনশন ডিল করবে। এটার জন্য এই পর্যন্ত আমাদের কোনো আইন নেই। আইন না থাকায় আমরা সুবিধাটা পেতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা মন্ট্রিল কনভেনশন সিগরেটরি কিন্তু বিষয়টি আইনে পরিণত করা হয়নি। তাই যাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনের মধ্যে মোটামুটিভাবে মন্ট্রিল কনভেনশনের প্রভিশনগুলো নিয়ে আসা হয়েছে।
সচিব বলেন, আইনের মূল ফোকাসটা হচ্ছে উড়োজাহাজযোগে যাত্রী, ব্যাগেজ ও কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে যদি যাত্রীর মৃত্যু হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ব্যাগেজ প্রাপ্তিতে বিলম্ব হয় বা হারিয়ে যায় বা ক্ষয়ক্ষতি হয়; কার্গো প্রাপ্তিতে বিলম্ব, হারানো বা ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে এই আইনের মাধ্যমে আমরা প্রতিকার পেতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আগে দেশে বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলে ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান ছিল না। ফলে নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবার কম ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। এ বিষয়ে আইন থাকলে ক্ষতিপূরণ পেত কয়েক গুণ বেশি। একেকজন কমপক্ষে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা করে পেত।
এ ছাড়া ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করলে সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজ কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি কেজির জন্য ৭০ ডলার করে জরিমানা আদায় করবে সরকার।
তিনি বলেন, আঘাতে যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ এক লাখ এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস বা আইএমএফের নিজস্ব মুদ্রা), যা এক লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। এটি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নির্ধারিত। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে দুই লাখ ৫০ হাজার ফ্রাঙ্ক (এক ফ্রাঙ্ক সমান ৯০০ সহস্রাংশ বিশুদ্ধতার সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রাম স্বর্ণের মূল্য)। মোটামুটি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রামের মূল্যমান হচ্ছে এক ফ্রাঙ্ক। এটা দুই লাখ ৫০ হাজার দিয়ে গুণ দিয়ে যা হয় তা পাবে।
এ ছাড়া ব্যাগেজের ক্ষেত্রে আগে প্রতি কেজি ছিল ২৫ ডলার, এখন তা ৭০ ডলার করা হচ্ছে। কার্গোর ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ২৫ ডলারের পরিবর্তে হচ্ছে ২৭ ডলার। এসব ক্ষতিপূরণ এয়ারলাইন্সকে দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।