কালীগঞ্জে কৃষিতে বিপ্লব এনেছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটে কৃষিতে বেশ সুনাম অর্জন রয়েছে অনেক আগে থেকে। কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে সম্প্রসারিত হচ্ছে ব্যাটারিবিহীন সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প।

সেই দিক থেকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের কমলারটারী ও কমলার দোলায় স্থাপন করা হয়েছে পৃথক পৃথক ২টি সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প। এ এলাকার কৃষকদের মুখে এখন সুখের হাসি।

আর ডিজেল কিনতে হচ্ছে না, বিদ্যুতের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না এখানকার কৃষকদের। স্বল্প খরচে ঝামেলামুক্ত ভাবে কৃষকরা তাদের কৃষি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সেচ সুবিধা ভোগ করায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ প্রযুক্তির চাহিদা। ফলে এ এলাকায় এখন দেখা দিয়েছে সবুজ কৃষি বিপ্লবের অপার সম্ভাবনা।

গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশান ও গ্রামীণ শক্তি’র তত্বাবধায়নে ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) এর আর্থিক সহায়তায় ঐ এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

এখন চাষিদের বিদ্যুতের অপেক্ষায় থাকতে হয় না, কিংবা ছুটতে হয় না ডিজেল চালিত পাম্প মালিকদের কাছে। বিঘা প্রতি ১৬৫০ টাকায় বোরো মৌসুমে ঝামেলামুক্ত ভাবে ফসলে সেচ পাচ্ছে কৃষকরা। এ সুবিধা না থাকায় অাগে কৃষকদের ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে ফসল ফলাতে খরচ হতো ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত।

১৫ কিলোওয়াট পাওয়ারে প্রতিটি সেচ পাম্প চালু রয়েছে। প্রকল্পের অনুকূলে ১২০ থেকে ১৫০ বিঘা জমি চাষের আওতায় রয়েছে। ১৫ কিলোওয়াট পাওয়ার সোলার সেচ পাম্প নির্মাণে ৫৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সোলার সিস্টেমে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পানি সরবরাহ করা হয়।

পাম্প গুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১৭ থেকে ১৮ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা যায়। এতে করে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ইউনিট বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়। এই সৌর সেচ পাম্প গুলো ঝামেলা ছাড়াই ২০ বছর টানা সার্ভিস দেবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

ওই এলাকার স্থানীয় কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিবার সেচ দিতে বিঘা প্রতি ২৫থেকে ৩০ লিটার ডিজেল কিনতে হতো। ৩০ লিটার ডিজেলের বাজার মূল্য ১৯৫০ টাকা সহ ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের ভাড়া দিতে হতো ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। কিন্তু এখন সোলার ইরিগেশন পাম্পের কারণে ঝামেলা ছাড়াই মাত্র ১৬৫০ টাকায় এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছেন তিনি।

একই কথা জানান ওই গ্রামের চাষি কমর উদ্দিন। তিনি বলেন, সেচের জন্য এখন আর বিদ্যুৎ ও ডিজেলের আশায় বসে থাকতে হয় না। শুধু রোদেলা দিন হলেই মাঠ ভেজাতে পারি। মাত্র ২০ মিনিটেই এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারছি।

সেচ দুটি দেখ-ভাল করার দায়িত্বে থাকা শ্রী চন্দ্র শেখর জানায়, সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প স্থাপন হবার পর কৃষিতে যেমন পরিবর্ত সাধিত হয়েছে তেমনি ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে।সৌরবিদ্যুৎ চালিত সোলার সেচ পাম্প আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। চাষাবাসে সেচ দিতে এখন আর কৃষকদের ডিজেল ও বিদ্যুতের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হচ্ছে না।

গ্রামীন কৃষি ফাউন্ডেশান কালীগঞ্জ ইউনিট ম্যানেজার মাহফুজার রহমান এ প্রতিনিধি বলেন, কৃষি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্য প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে হবে। এরই ধারাবাহীকতায় সামনের দিকে কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চল গুলোকে ইডকলের তত্বাবধায়নে জরিপ করে জেলায় ৫০/৬০ টি সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে কৃষকরা ঝামেলামুক্ত ভাবে সেচ সুবিধা পাবে।

তবে সময় ও অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হওয়ায় এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে এই এলাকার কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আধুনিক এ প্রযুক্তির সেচ পদ্ধতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *