ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেশের ২৫টি জেলায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া, পাবনা ও গোপালগঞ্জে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘সকালে দেশের ২৫টি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য আমি গত বৃহস্পতিবার রাতে সব জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। একই সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকতে বলেছি। প্রতিটি জেলায় মন্ত্রণালয় অথবা অধিদপ্তর থেকে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে পাঠানো কোড নম্বরের ওপর ভিত্তি করে নিজ নিজ জেলায় প্রশ্ন প্রিন্ট করা হয়েছে। সার্বিকভাবে বলা যায়, প্রথম ধাপের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’
আকরাম-আল-হোসেন আরো বলেন, ‘সাতক্ষীরায় পরীক্ষা শুরুর বেশ আগেই একটি প্রশ্ন ফাঁসচক্রের সদস্যদের আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমি জেলা প্রশাসককে প্রশ্ন ফাঁসচক্রের উত্স খোঁজার জন্য বলেছি। যাদের ধরা হয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছি।’
আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যরা কলারোয়া থানার সামনে অবস্থিত সোনালী মার্কেটের ‘কিডস ক্লাব’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে অভিযান চালান। এ সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৯ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে আটজন অভিভাবক হওয়ায় তাঁদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আটককৃত বাকি ২১ জনের প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন প্রশ্ন ফাঁসচক্রের হোতা কুষ্টিয়ার পরানখালী গ্রামের আব্দুল হালিম (৩৯), সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার সেনেরগাঁতি জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার আফতাবুজ্জামান (৩৫), কলারোয়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলাম (৩৫), কৃষি ব্যাংক কলারোয়া শাখার কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম (৩৮), আশাশুনির চেউটিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৩৫), কাকবাসিয়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম (৩৫), কুন্দড়িয়া গ্রামের সুমেন্দ্র ঘোষ (৩০), শ্যামনগরের গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল হালিম (২৩), হুমায়ুন কবীর (২৭), আশাশুনির লাউতাড়া গ্রামের সন্নাসী কুমার সরকার (২৮), কাকবাসিয়া গ্রামের রিয়াছাদ আলী (২৯), চেউটিয়ার দিদারুল ইসলাম (৩০), সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাছিমপুরের বিশ্বজিত্ ঘোষ (৩০), আশাশুনির প্রতাপনগরের সাইফুল্লাহ (২৯), শ্যামনগরের গোবিন্দপুরের সানজিদা বকুল (১৯), আশাশুনির মহিষকুড়ের নাজমুন নাহার (২৯), কল্যাণপুর গ্রামের রাবেয়া (২৫), চেউটিয়া গ্রামের সেলিনা খাতুন (২৬), তুয়ারডাঙ্গার তানিয়া সুলতানা (২৬) ও গোকুলনগরের সুমাইয়া খাতুন (২২) এবং সদর উপজেলার রসুলপুরের মুস্তারিয়া (২১)।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে শহরের শুভ ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহূত সরঞ্জামাদিসহ ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, গতকাল সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের শুভ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে চারজন বহিরাগত যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন শাকিব উদ্দিন (২০), আব্দুস সোবাহান (২১), আনোয়ার হোসেন (২৪) ও সানাউল্লাহ সানি (২৪)। এই চারজনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষায় অসত্ উপায় অবলম্বনের অভিযোগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মিতু খাতুন, আলেফা খাতুন, নিশাত খান, আতাউর রহমান ও সেন্টু জোয়ার্দার নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এদিকে গোপালগঞ্জে পরীক্ষা চলাকালে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে প্রতাপ মণ্ডল নামে এক পরীক্ষার্থীকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গোপালগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন টিপু এ নির্দেশ দেন। বিকেলে প্রতাপকে জেলে পাঠানো হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা আগামী ৩১ মে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২১ জুন ও ২৮ জুন তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে ২৪ লাখ এক হাজার ৯১৯ প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।