ঢাকা: সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তিন লাখেরও বেশি শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কয়েকজন সচিব সূত্রে এসব তথ্য জানান। বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৬৬ জন সচিব। সভায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় শূন্যপদ পূরণে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থায় শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের জন্য শূন্যপদের তথ্য এবং পদ পূরণের জন্য কর্মপরিকল্পনা চাওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি গত ৪ মার্চ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থায় পাঠানো হয়।
এ ছাড়া ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সচিব সভায় শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ কারণে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় শূন্যপদ পূরণে প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নে প্রত্যেক সচিবকে তাগিদ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন জানান, সচিব সভায় শূন্যপদ পূরণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাই শূন্যপদগুলোতে দ্রুত চাকরি দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ২০ লাখ ৫০ হাজার ৮৬১ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৭টি। এসব শূন্যপদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির পদ রয়েছে ৪৮ হাজার ৭৯৩, দ্বিতীয় শ্রেণির ৬৫ হাজার ৮৩, তৃতীয় শ্রেণির ২ লাখ ৬ হাজার ৭৬০ এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ৭৯ হাজার ২৬১টি।
এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পদে প্রায় ৫০ হাজার অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া শূন্যপদের মধ্যে পুলিশে ৫০ হাজার লোক নিয়োগ দেয়া হবে। এ ছাড়া আনসার-ভিডিপি, বিজিবি ও দমকলসহ বিভিন্ন বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হবে ৫ হাজার লোক।
দেশের শিক্ষা খাতকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন পদে প্রায় ৫০ হাজার লোক নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ৫৯৭ সরকারি কলেজে প্রভাষকের প্রায় ৫ হাজার পদ শূন্য রয়েছে।
৪১তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোরও শূন্যপদ পূরণ করা হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে প্রায় ২৫ হাজার।
ইতিমধ্যে ১০ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। বাকি ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগে শিগগিরই সার্কুলার দেয়া হবে।
এ ছাড়া পিয়ন ও দফতরি পদে প্রায় ৫ হাজার লোক নিয়োগ দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে সরকারের।
আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির জন্য সুপারিশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। সেই হিসেবে আরও ৬৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৪০ হাজার ৮৯টি পদ শূন্য রয়েছে। দেশের ব্যাংক সেক্টরেও চলতি বছরের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার লোক নিয়োগ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শিগগিরই বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ব্যাংকের বিভিন্ন পদে আরও পাঁচ হাজার লোক নেবে বলে জানা গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও রেলওয়েতে ৬০ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদ পূরণের জন্য নিয়োগ দেবে সরকার।
এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সমাজসেবা অধিদফতর, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরসহ বিভিন্ন পদে ৫০ হাজার লোক নিয়োগ করা হবে।