বন্ধ হচ্ছে ছোট পোশাক কারখানা

অর্থ ও বাণিজ্য

pic-08ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন একর্ড ও অ্যালায়েন্সের নিরীক্ষায় গত ছয় মাসে শুধু চট্টগ্রামে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে ৮০টির বেশি পোশাক কারখানা। কমপ্লাইয়েন্স দুর্বলতা এবং অর্ডার না পেয়ে সারা দেশে প্রায় অনেক ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ একই সময়ে অতিরিক্ত অর্ডারের চাপ সামলাতে কারখানা সম্প্রসারণ করছে বড় নামি প্রতিষ্ঠানগুলো।

চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের হিসাবে, জুন মাসের পর থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। আর পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের হিসাবে বন্ধ হওয়া কারখানার পরিমাণ ৮০টির বেশি। এই কারখানাগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ হয়েছে কমপ্লাইয়েন্সগত কারণে অর্ডার না পেয়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত ইয়াংওয়ান গ্রুপ, প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড, রিজেন্সি, কেনপার্ক, ইউনিভোগ, মুডিস্ট এবং ইপিজেডের বাইরে ফোর এইচ গ্রুপ তাদের কারখানা সম্প্রসারণ করছে অতিরিক্ত অর্ডার সামাল দিতে। কারণ বিদেশি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো কমপ্লাইয়েন্সের ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি নয়। বায়ারদের এই মনোভাব বুঝতে পেরে সম্প্রসারণে মনোযোগী হয়েছে বড় পোশাক কারখানাগুলো।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুটি পুরনো প্রতিষ্ঠান কিনে সেখানে কারখানা সম্প্রসারণ করছে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ। এনএইচটি ফ্যাশন নামের কারখানাটি চালু হলে প্যাসিফিকের উৎপাদন ক্ষমতা আরো ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়বে।

প্যাসিফিক জিন্সের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে তাঁদের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা এক লাখ জিন্স। নতুন কারখানাটি চালু হলে উৎপাদন তা এক লাখ ২৫ হাজারে উন্নীত হবে।’ একই ইপিজেডে অবস্থিত শ্রীলঙ্কান মালিকানার রিজেন্সি ও ইউনিভোগ বহুতল ভবন তৈরি করছে।

বন্ধ হচ্ছে ছোট পোশাক কারখানা

ফোর এইচ গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানান, চাপ সামলাতে আমরা আগে কিছু সাব-কন্ট্রাকে কিছু কাজ করাতাম। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদার কারণে এগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এ কারণেও নতুন কর্তৃপক্ষ নতুন কারখানার দিকে মনোযোগ দিয়েছে।

চট্টগ্রামের মতো একই অবস্থা ঢাকায়। এ দেশে গার্মেন্টশিল্পের গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারই গার্মেন্টের সংখ্যা না বেড়ে উল্টো কমেছে। বিজিএমইএর হিসাবে, ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে দেশে গার্মেন্টের সংখ্যা ছিল ৩৮৪টি এবং এতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ ২০ হাজার। এরপর ধারাবাহিকভাবেই গার্মেন্ট এবং শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরেও দেশে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৬০০টি। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই কারখানার পরিমাণ কমে এসে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৩৬টি। গার্মেন্টশিল্পের ইতিহাসে এবারই প্রথম কারখানা কমার ঘটনা ঘটল। এর বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক।

ঢাকার স্ক্যানডেক্স নিটওয়্যার লিমিটেডের গ্রুপ মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ, প্রশাসন এবং কমপ্লাইয়েন্স) মোহাম্মদ ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত সব ক্রেতা অগ্নি, ভবন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা যাচাই-বাছাই করে। ছোট কারখানাগুলো ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে বিপুল পরিমাণ টাকার প্রয়োজন সেটার সংস্থান করাও ছোট কারখানার মালিকদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর ঝুঁকি নিতে চায় না বলে বড় বায়াররাও কমপ্লাইয়েন্স কারখানায় অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে সাব-কন্ট্রাকের কিংবা ছোট কারখানাগুলোর টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গ্যাপের একজন মার্চেন্ডাইজার নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘রানা প্লাজা ও তাজরীন ট্র্যাজেডির পর আমাদের প্রতিষ্ঠান কমপ্লাইয়েন্সকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। এ কারণে আগে কিছু ছোট ফ্যাক্টরিকে কাজ দিলেও এখন সে ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক। তা ছাড়া আমরা এখন কারখানার সক্ষমতাও যাচাই করি। এসব বিচারে অনেক সময় ছোট কারখানাগুলো বাদ পড়ে যায়।’

কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রচুর অর্ডার থাকা সত্ত্বেও তা ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে জানান বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুঃসময়টা মনে হচ্ছে আমরা কাটিয়ে উঠেছি। একর্ড ও অ্যালায়েন্স তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ভালো কারখানা ছাড়া তারা অর্ডার দেবে না। জানুয়ারি মৌসুমের জন্য প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। কিন্তু অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এ কারণে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় প্রচুর অর্ডার চলে যাচ্ছে। এ কারণে মনে হচ্ছে চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *