আছিয়া বেগমের জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন ব্যবসায়ী

Slider গ্রাম বাংলা


রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ গ্রামের চার সন্তানসহ তাঁর বসবাস বেলদিয়া গ্রামে মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী আছিয়া বেগমের। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ১লা জানুয়ারী ১৯৩৭। ২০বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন। ৫০বছর যাবৎ এলাকার বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়েকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন বয়সের ভারে নূহ্য হয়ে পড়া আছিয়া বেগম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন শিক্ষা দেয়ায় বেশ কিছুদিন আগে আছিয়া বেগমকে নিয়ে শ্রীপুর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লার একটি ফেসবুক পোষ্ট ভাইরাল হয়। ওই পোষ্ট হওয়া ভিডিওটিতে তিনি জানিয়েছিলেন, জীবনের বড় ইচ্ছা পবিত্র কাবাঘর, মক্কা-মদিনা যাওয়া। কিন্তু অর্থ সংকটে সংসারে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি আছিয়া বেগম। অবশেষে ফেসবুকে পোষ্ট দেখে আছিয়া বেগমের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন সাদ্দাম হোসেন অনন্ত নামের এক ব্যবসায়ী। অবশেষে সেই আছিয়া বেগম ৪ মে দিবাগত রাত তিনটার ফ্লাইটে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন।

শুক্রবার বিকেলে আছিয়া বেগমের বাড়ীতে গিয়ে দেখা তিন ভিটায় তিনটি ঘর। বাড়ির উত্তরের ঘরটিতে তার বসবাস। ঘরে ভেতর আসবাব বলতে একটি চৌকি, কাপড় রাখার আলনা, আর একটি সোকেস। ঘরের এক কোণে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি ইসলামী বই।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে সম্পর্কে আমার বড় ভাই আবুল বাশার ঢাকার আশুলিয়া থেকে আছিয়া বেগম সম্পর্কে খোঁজ দেন। পরে ওই আছিয়া বেগমকে আমি খুঁজে বের করে তাঁর সাথে দেখা করে অসহায়ত্বের কথা শুনি এবং দীর্ঘদিন যাবৎ নবীজির রওজা শরীফ দেখার খুব ইচ্ছার কথা জানান। আমি ওই ভিডিও চিত্রটি ফেসবুকে প্রচার করি। প্রচারের পর সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসার কথা জানান। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক সাদ্দাম হোসেন অনন্ত ওই বৃদ্ধের ইচ্ছা পূরণের এগিয়ে এসেছেন।

আছিয়া বেগম প্রতিবেশী কাওসার আহেমদ জানান, শুধু আমি না, আমার বাবাও তাঁর কাছ কোরআনের শিক্ষা নিয়েছি। এখন আমার ৮বছর বয়সী সন্তান তানবীর আহমেদ তাঁর কাছ থেকে কোরআন শিক্ষা নিচ্ছে। আমাদের আশপাশে অনেক মহিলা-পুরুষ এখনও তাঁর কাছ কোরআন শিক্ষা নিচ্ছে।

আরেক প্রতিবেশী খাইরুল ইসলাম জানান, এই এলাকার এমন কেউ বাদ নেই যে আছিয়া বেগমের কাছ থেকে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেনি। দিনের পুরো সময়ই তিনি কোরআন শিক্ষা দিয়ে ব্যয় করে থাকেন। এ কোরআন শিক্ষার জন্য তার কোন চাহিদা নেই। কেউ যদি খুশি হয়ে যা দিয়ে থাকে তাই নেয়। না দিলেও কারো কাছ থেকে কোন দিন দাবি করেননি।

ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন অনন্ত জানান, ফেসবুকে আমি ভিডিওটি দেখে ওই বয়স্কা নারীর খোঁজ খবর নিই। পরে পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানের টিকিটসহ যাবতীয় খরচ দিয়ে তাকে ওমরা হজ্বে যাওয়ার ব্যবস্থা করিয়ে দিই। সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমি কাজটি করে কিছু আনন্দ পাচ্ছি। আমি সবসময়ই এধরনে কাজ বেশি বেশি করতেই চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *