প্রশাসনিক কর্মকর্তা হত্যায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

Slider বাংলার আদালত

ঢাকা: ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক ওরফে আনিস খাদেম হত্যায় ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক আবদুর রহমান সরদার এই রায় দেন। একই মামলায় এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। খালাস পেয়েছেন এক আসামি।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন শহিদুর রহমান খাদেম ওরফে মিনু খাদেম, মাহবুব আলম লিটন, শেখ শামীম আহম্মেদ, জুয়েল, কামাল হোসেন বিপ্লব ও সোহেল ওরফে ক্যাটস আই সোহেল। এঁদের মধ্যে মাহবুব ও কামাল পলাতক। যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামি নাজিম উদ্দিন বাবু পলাতক। খালাস পেয়েছেন আজগর হোসেন রানা।

প্রায় ১০ বছর আগে ২০০৯ সালের ৩ মে মালিবাগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক ওরফে আনিস খাদেমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাইদুল হক খাদেম বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, নিহত আনিস খাদেম প্রধান আসামি শহিদুর খাদেমের আত্মীয়। ঘটনার সময় আসামি শহিদুর ‘সৈয়দ আহম্মেদ ওয়াক্ফ স্টেটের’ সচিব ছিলেন। খুনের দায় স্বীকার করে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালতকে শহিদুর বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি সৈয়দ আহম্মেদ ওয়াক্ফ স্টেটের সচিব নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেখেন, অনেক খাদেম সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। আনিস খাদেম তাঁদের একজন। এ নিয়ে মূলত বিরোধ শুরু হয়। পরে আনিস খাদেমসহ কয়েকজন তাঁকে পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ২০০২ সালে তাঁর অফিস দখল করে নেয়। তাঁকে মূর্তি পাচারকারী হিসেবে পরিচিত করতে পত্রিকায় মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করায়। ২০০৭ সালে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি সামাজিকভাবে অপমানিত হন। তাঁর মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁকে খারাপ ভাবতে শুরু করেন। মেয়েকে আর তাঁরা তুলে নেয়নি। এই ঘটনা তিনি আসামি লিটন ও শামীমকে বলেন। তখন তাঁরা তাঁকে বলেন, এসব লোককে দুনিয়া থেকে বিতাড়িত করব।’

কীভাবে খুন করা হয়, এ ব্যাপারে আসামি শেখ শামীম আহম্মেদ আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

শামীম আদালতকে বলেন, একদিন শহিদুর তাঁকে ফোন দেন। তাঁকে তাঁর গুলশানের বাসায় দেখা করতে বলেন। এরপর তিনি শহিদুরের বাসায় যান। শহিদুর তাঁকে বাসার ছাদে নিয়ে যান। এক ব্যক্তির ছবি ও মোবাইল নম্বর দেন। শহিদুর সেদিন তাঁদের বলেন, লোকটি ভালো না। তাঁর অনেক ক্ষতি করেছে। এর কিছুদিন পর শহিদুর আরেকটি মামলায় জেলহাজতে যান। তখন জেলখানায় গিয়ে শহিদুর ও বাবুর সঙ্গে দেখা করেন শামীম। জেলখানায় শহিদুর তাঁকে বলেন, যে লোকটির ছবি দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে। মাজারে অনুদান দেওয়ার কথা বলে তাঁকে ডেকে আনার পরিকল্পনা করতে বলেন। রায় বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী আনিস খাদেমকে ফোন দেন শামীম। ফোনে নিজেকে নাম করা একটি কোম্পানির মালিকের ব্যক্তিগত সচিব বলে পরিচয় দেন। বলেন, তাঁর কোম্পানির মালিক মাজারে অনুদান দিতে চান। মালিক কথা বলতে চান। দেখা করতে সম্মত হন আনিস। শামীম আনিস খাদেমকে বলেন, তাঁদের কোম্পানির পিয়ন সোহেল তাঁকে নিয়ে আসবে।

আসামি সোহেল আদালতে বলেন, শামীম সেদিন আনিস খাদেমকে ফোন দেন। শামীমের কথামতো তিনি আনিস খাদেমকে আনার জন্য মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারের সামনে যান। তিনি আনিস খাদেমকে দুই বার ফোন দেন। আনিস আসলে তিনি শাহী মসজিদের গলিতে নিয়ে আসেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জুয়েল আদালতকে বলেন, সোহেল ওই লোকটিকে রিকশায় করে নিয়ে আসে। আসার পর লোকটির মোবাইল কেড়ে নিয়ে গালে দুটি থাপ্পড় দেন তিনি। এক পর্যায়ে লোকটিকে গুলি করেন। সেই গুলি লাগে বুকের বাম পাশে। লিটনও গুলি করে। পরে তাঁরা পালিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *