অসহনীয় গরমে দুঃসহ জীবন

Slider সারাদেশ


তাপপ্রবাহের কারণে ‘অসহনীয়’ গরম পড়েছে দেশজুড়ে। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে এসেও বৃষ্টি না থাকায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়ছে। মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে ঢাকাসহ সারাদেশে। টানা চার দিনের তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারাদেশ। তীব্র গরমের সঙ্গে তীব্র লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

অবশ্য শিগগিরই স্বস্তি মিলছে না। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, জুনজুড়েই থাকবে গরমের তীব্রতা। এর মধ্যে দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ আগামী চার থেকে পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

আবাহওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে এতে গরমের অস্বস্তি কাটবে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে স্বাভাবিক গড় তাপমাত্র থাকার কথা ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেশের অনেক জায়গায় ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

চলমান তাপপ্রবাহের কয়েকটি কারণের কথা বলছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। যার একটি ঘূর্ণিঝড় মোখা। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম বলেন, সাইক্লোন মোখার কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছিল। ফলে ভারত-বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেশি। মোখার সময় এই পুরো বেল্ট ওভারহিটেড হয়ে যায়। এটা একটা কারণ।

তিনি জানান, মোখার প্রভাবে এখনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আর সে থেকে ‘লু হাওয়া’ বইছে বাংলাদেশের দিকে।

বজ্রঝড় কমে যাওয়াও তাপপ্রবাহের একটা কারণ বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, প্রত্যেকবার মে মাসে ১৮ থেকে ২৪ দিন বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর আনাগোনা থাকে। ফলে হিমালয় থেকে সেভেন সিস্টার্স পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বজ্রঝড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টিও কম হচ্ছে, মাটি উত্তপ্ত থাকছে। তাপপ্রবাহের আরেকটা কারণ হলো বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য, যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বাতাসের গতিবেগও এখন অনেক কম বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। ফলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম জানান, বৃষ্টি হলে তাপপ্রবাহ কমবে। চলতি মাসের ৯ থেকে ১০ তারিখে বৃষ্টিতে সিলেট আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাপপ্রবাহ কমে আসবে।

এপ্রিল ও মে মাসজুড়েই তাপপ্রবাহ, কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের দাপট ছিল। গত ৪ থেকে ১২ এপ্রিল মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের এবং ১৩ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল তীব্র এবং ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল আবারও মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। মে মাসের মাঝামাঝিতে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে তাপমাত্রা কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল। এর পরের সাত থেকে দশ দিন ঝড়বৃষ্টির দাপটের পর গত সপ্তাহে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। গত রবিবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়ে মঙ্গলবার তা সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। তাপপ্রবাহের সঙ্গে বাড়ছে লোডশেডিং। রাজধানীতেও বেড়েছে লোডশেডিং। গরম ও লোডশেডিংয়ে বেশি কষ্টে আছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, গত মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি জুন মাসেও কম বৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে; ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে; ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন বৃষ্টি বয়ে আনবে মৌসুমি বায়ু। তা আসতে একটু দেরি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু সৃষ্টি হওয়ার পরপরই বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ করে মূলত টেকনাফ অঞ্চল দিয়ে। ৩০ বছরের গড় হিসাবে ৩১ মে টেকনাফ, ১ জুন কক্সবাজার, ২ জুন চট্টগ্রাম ও ৪ থেকে ৫ জুন দেশের মধ্যাঞ্চলে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। এ সময়ের কিছু হেরফের হয় বটে। এবারও হয়েছে।

নাজমুল হক বলেন, টেকনাফ অঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটতে আরও তিন দিন দেরি হতে পারে। এর পর দেশের অন্যত্র তা প্রবেশ করবে। তার পরই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *