অটোমেশনের পর সূচক-লেনদেনে পতন

অর্থ ও বাণিজ্য

stokদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নতুন অটোমেশন ট্রেডিং সিস্টেম (স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থা) চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই সূচক কমেছে। টাকার অঙ্কে লেনদেনও কমেছে অধিকাংশ কার্যদিবসে। অটোমেশন সিস্টেম চালুর দিনই ডিএসইতে গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়।

চলতি মাসের ১১ তারিখ ডিএসইতে নতুন ট্রেডিং সফটওয়্যার চালু করা হয়। অত্যাধুনিক এই সফটওয়্যার ব্যবহারে ডিএসই’র লেনদেন আরো আধুনিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ডিএসইতে টেকনিক্যাল ট্রেডিং শুরুর প্রায় ১৬ বছর পর নতুন ট্রেডিং সফটওয়্যার চালু হয়। এই পদ্ধতিতে লট সাইজ নেই। ফলে যে কোনো পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করা যাচ্ছে।

নতুন সফটওয়্যারের ব্যবহারে বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা এখনও অভ্যস্থ হতে না পারা ও ট্রিকারসহ কিছু বিষয় না থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে নতুন সফটওয়্যারে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অত্যাধুনিক সফটওয়্যারে লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অভ্যস্থ হতে সময় লাগবে। আর বিনিয়োগকারীরা নতুন পদ্ধতি ভালোভাবে বুঝলেই লেনদেনও বেড়ে যাবে।

মডার্ন সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী সুমন মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত না করে সফটওয়্যারটি চালু করায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ট্রিকার না থাকা, রঙের ব্যবহার ঠিক না থাকায় চোখে চাপ পড়া, টপটেন কোম্পানির শেয়ারের তালিকা দেখা না যাওয়া, মোট হিসাব দেখা না যাওয়ায় তাদের বিভ্রাটে পড়তে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রায় একই কথা বলেন একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা নতুন সফটওয়্যারের জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। একটি ক্রয় বা বিক্রয়ের অর্ডার দিলে আবার নিশ্চিত করতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এছাড়াও এই সফটওয়্যারের সমস্যা হলে হঠাৎ করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও এই সফটওয়্যারকে আমরা ব্যবহার বান্ধব করে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অটোমেশন ট্রেডিং সিস্টেম চালুর আগে ঝুঁকির দিকগুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এ সিস্টেমটি বাংলাদেশের বাজারের জন্য উপযোগী নয়। এটা আমেরিকার জন্য যথাযথ।’

ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই প্রশিক্ষণে অংশ নেননি। যারা করেছেন তাদের পক্ষ থেকে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে না।’

এ সফটওয়্যার আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন সিস্টেমটি চালু করেছি। সিস্টেমটি চালুর জন্য বিভিন্ন ব্রোকারকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো শঙ্কা নেই।’

নতুন এই স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থা ম্যাচিং ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে নাসডাক ওএমএক্স। আর ব্রোকার হাউসের জন্য অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমস পিটিই লিমিটেড থেকে নেওয়া হয়েছে। এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য ডিএসইর ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *