ক্রাইস্টচার্চ হামলা স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হুসনে আরা

Slider লাইফস্টাইল


সিলেট: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলা নিহত হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি হুসনে আরা পারভীন (৪২)। মসজিদে গোলাগুলির খবর শুনে স্বামী ফরিদ উদ্দিনকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন তিনি। হুসনে আরার বাবার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালহাটা গ্রামে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত হুসনে আরার স্বজনেরা জানান, ক্রাইস্টচার্চে স্বামীর সঙ্গে থাকেন হুসনে আরা। এক দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁর স্বামী ফরিদ হুইল চেয়ারে চলাচল করেন। হামলার সময় তাঁর স্বামী ও তিনি ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের ভেতরে পৃথক স্থানে ছিলেন।

হুসনে আরার বড় বোন রওশন আরা বেগম বলেন, সন্ত্রাসী হামলার পরপরই তাঁদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ফোন করে হুসনে আরার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে হুসনে আরার স্বামী ফরিদ উদ্দিন বেঁচে গেছেন।

পরিবার ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, হুসনে আরারা তিন বোন ও দুই ভাই। স্বামী ফরিদ উদ্দিনের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার চকগ্রামে। হুসনে আরা-ফরিদ দম্পতির শিফা আহমদ নামে ১৬ বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান আছে। ১৯৯৪ সালে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাঁরা নিউজিল্যান্ডে চলে যান। ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বসবাস করতেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাঁরা দেশে এসেছিলেন। ফরিদ সেখানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকে হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতেন। বাইরে বের হলে সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী হুসনে আরা।

গোলাপগঞ্জ থেকে হুসনে আরার ভাগনে মাহফুজ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি প্রায় ১৫ মিনিট পর গুলির শব্দ শুনে খালা তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর জন্য খুঁজতে বের হন। এ সময় অস্ত্রধারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।’

রাতে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে মাহফুজ চৌধুরী বলেন, নিউজিল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হুসনে আরার মরদেহ এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি। তবে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিউজিল্যান্ডে অবস্থানকারী তাঁর স্বজনদের জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের বাইরে গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুসল্লি সম্ভবত হুইল চেয়ারসহ খালুকে (ফরিদ) বের করে নিয়ে গেছেন, ফলে তিনি বেঁচে গেছেন।’

রওশন আরা বেগম বলেন, কোরআন শরিফ ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারতেন হুসনে আরা ও তাঁর স্বামী। তাঁরা দুজন মসজিদে গিয়ে ইংরেজি ভাষাভাষীদের কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করে শোনাতেন। মসজিদের একটি অংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। অপর অংশে পুরুষেরা নামাজ আদায় করতেন। ঘটনার সময় হুসনে আরা নারীদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে ছিলেন। সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ফরিদ উদ্দিন বর্তমানে ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকলেও পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। সেখানকার পুলিশ তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দিচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *