আর দেখা হলো না বাবার সঙ্গে

Slider লাইফস্টাইল


ঢাকা: রাব্বি। বয়স এক বছর ছুঁই ছুঁই। মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছে বাবার সন্ধানে। চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে
নিখোঁজ রাব্বির বাবা মো. শাহাবুদ্দিন। ভোলার শাহাবুদ্দিন কামরাঙ্গির চরে থেকে কখনও রিকশা আবার কখনও ভ্যান চালাতেন। চকবাজারের আগুনের ঘটনার আগে স্ত্রী ছকিনা বেগমের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। বলেছিলেন ভ্যানের মালামাল নামিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাবেন। এরপর থেকে অপেক্ষায় স্ত্রী।

টাকাতো পাঠাতে পারেননি। খোঁজও মিলছে না তার। স্বামীর সন্ধানে তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভোলা থেকে ঢাকা মেডিকেলে আসেন ছকিনা। তার বড় ছেলে শান্তর বয়স ১১, সে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মেজো ছেলে সাগর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ২০শে ফেব্রুয়ারি বুধবার। রাত আটটায় ভ্যানে পণ্য নিয়ে বের হয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন। সাড়ে নয়টায় দিয়েছিলেন স্ত্রীকে ফোন। তখন তিনি জানান, চকবাজারে পণ্য নামিয়ে দিয়ে পাঠাবেন এক হাজার টাকা। কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বানিয়েছিলেন টিনের নতুন বাড়ি। সঙ্গে কিনেছেন একটি গরু। এক হাজার টাকার মধ্যে কিস্তি দেবার কথা ছিল ৫শ’ টাকা।

চকবাজারে আগুনের খবর জানতো না তার পরিবার। রাত ১১টার দিকে ছকিনা ফোন দিয়ে মোবাইল বন্ধ পান শাহাবুদ্দিনের। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালেও চেষ্টা করে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। আবার সেদিন সকাল থেকে বাড়িতে ছিল না বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ আসে দুপুর ১টায়। দুপুর ৩টার দিকে টেলিভিশনের খবরের মাধ্যমে জানতে পারেন আগুনের ঘটনা। ফের ফোন দিয়েও বন্ধ পান মোবাইল। যোগাযোগ করেন গ্যারেজে। জানতে পারেন গতকাল রাতে ফেরেনি শাহাবুদ্দিন। রিকশা বা ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে কখনোই এমনটা করেননি তিনি। কোনো কারণে দেরি হলে ফোন দিয়ে জানাতেন গ্যারেজে।

সেদিন বিকালেই লঞ্চে করে ঢাকায় রওনা দেন ছকিনা বেগম। পরদিন শুক্রবার হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন স্বামীকে। চকবাজারে খোঁজ করেন। খোঁজ করেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। না পেয়ে ছুটে যান মিডফোর্ড হাসপাতালে। সেখানেও খুঁজে পাননি লাশ। এরপর নিরুপায় হয়ে ফিরে যান ভোলাতে। থেকে যান শাহাবুদ্দিনের বাবা হাসান আলী। দেন ডিএনএ নমুনা।

গতকাল সোমবার তার স্ত্রী ছকিনা বেগম ফের আসেন রাজধানীতে। স্বামীর লাশের সন্ধানে। এবার তার সঙ্গী হন তিন সন্তান। উদ্দেশ্য সন্তানদের ডিএনএ’র নমুনা দেয়া। ভোরে লঞ্চ থেকে নেমে চকবাজার মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। সেখানে উল্লেখ করেন- শাহাবুদ্দিনের গায়ের রং কালো। লুঙ্গি ও শার্ট পরিহিত। মাথার চুল বড়। মুখমণ্ডল লম্বাটে। হাতে আংটি। এরপর সকালে ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। এখানেও দেন নিখোঁজ স্বামী শাহাবুদ্দিনের শরীরের বর্ণনা। বর্ণনা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন ডিএনএ নমুনা প্রদানের। অসহায় পরিবারটির হাতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির ছবি। এই ছবিটাই এখন তাদের সঙ্গী। তিনি বেঁচে আছেন না মৃত্যুবরণ করেছেন তাও জানা নাই তাদের।

শাহাবুদ্দিনের বড় ছেলে শান্ত। তার সঙ্গে বাবার শেষ কথা হয়েছিল বুধবার সকালে। শান্ত অশ্রুসিক্ত চোখে জানান, বাবা তাকে ভালো করে পড়ালেখা করার কথা বলেছিলেন। শুক্রবারে বাড়ি আসবেন এও বলেছিলেন। শাহাবুদ্দিন ২০/২২ দিন পরপর বাড়ি ফিরতেন। এবার আর ফিরলেন না।

শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ছকিনা বেগম শোকে পাথর। কাঁদতে ভুলে গেছেন। তিনি বলেন, বাইচা আছে না মইরা গেছে হেও জানি না। মইরা গেলেও যেন লাশটা পাই। বাচ্চাগুলো যেন জানে এইটা তাদের বাপের কবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *