মালয়েশিয়াগামী ট্রলারে গুলি, নিহত ৫

Slider চট্টগ্রাম জাতীয় টপ নিউজ নারী ও শিশু সারাদেশ সারাবিশ্ব

Malosia_sm_696471092
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী একটি ট্রলারে গুলি চালিয়েছে বন্ধুকধারীরা। এতে ট্রলারের নাবিকসহ পাঁচজন নিহত ও ৪০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সাগর থেকে মালয়েশিয়াগামী ট্রলারটি উদ্ধার করে সেন্টমার্টিনের উপকূলের নিয়ে আসা হয়েছে। কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনী যৌথভাবে তাদের উদ্ধার করে। ট্রলারটিতে ৩০৩ জন যাত্রী ছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটে উদ্ধারকৃত থাইল্যান্ডের মালিকানাধীন ওই ট্রলার থেকে হতাহতদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল।
এ ঘটনায় মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের তিনজন নাবিককে আটক করেছে সেন্টমার্টিন পুলিশ।
বুধবার সেন্টমার্টিনের ছেড়া দ্বীপের কাছাকাছি বাংলাদেশের জলসীমায় পূর্ব-দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আজ বুধবার ১১টার দিকে এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
গুলিবর্ষণের শিকার থাইল্যান্ডের মালিকানাধীন ওই ট্রলার থেকে নংসিংদীর মিঠুন মোবাইলে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য মহেশখালী থেকে গত সোমবার রাতে ওই ট্রলারে তোলা হয়। কিন্তু তারা আরো যাত্রীর আশায় ট্রলারটি অপেক্ষায় রাখে। এসময়ে তাদের ঠিক মতো খাবার ও পানীয় দেয়া হয়নি। এ নিয়ে বুধবার সকালে ট্রলারের ক্রুদের সাথে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ লেগে যায়। ওই সময় সাগরে অবস্থানরত চারটি জাহাজ মালয়েশিয়াগামী ট্রলারটিকে ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে।
দুপুরে মালয়েশিয়াগামী মিঠুনের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে তিনি নয়া দিগন্তকে এভাবে বলেন, ‘ভাই, দুটি জাহাজ দেখতে পাচ্ছি। জাহাজ দুটি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ভাই, ২০ জন লোক গুলি খেয়ে পড়ে আছে। পাঁচজন মরে গেছে। বাকিরা চরম আতঙ্কে আছি।’
দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থল থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোবাইল ফোনে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন আক্রান্ত ট্রলারের যাত্রী মিঠুন।
মিঠুন বলেন, তিনিসহ যাত্রীরা সবাই অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ট্রলারটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়িয়ে আরো ১০/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে গেলে কে বা কারা তাদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
তিনি আরো বলেন, যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কারো গুলি লেগেছে পেটে, কারো হাতে, বুকে কিংবা পায়ে। আর যাদের মাথায় গুলি লেগেছে তারা ইতোমধ্যেই মারা গেছেন।
নিহতদের পরিচয় ও বিস্তারিত জানতে পারলেও আতঙ্কের কারণে কথা বলতে পারছিলেন না মিঠুন।
শেষ খবরে নরসিংদীর ছেলে মিঠুন আরো জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং বিকল হয়ে পড়া ট্রলারটি বেঁধে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে।
টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. কাজী হারুন অর রশিদ জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে কোস্টগার্ডের কয়েকটি টিম তাদের উদ্ধার করে টেকনাফের দিকে রওয়ানা দিয়েছেন।
টেকনাফের জিয়াউর রহমান নামে এক যাত্রী জানান, মহেশখালী উপকূল থেকে গত সোমবার রাতে এটি মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ট্রলারটি সেন্টমার্টিন এলাকায় পৌঁছে আরো কিছু যাত্রী উঠার কথা ছিল।
তিনি জানান, সেন্টমার্টিন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে তিনশ’ যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি নোঙর করা ছিল। হঠাৎ করে পাশে আরো একটি মালয়েশিয়াগামী ট্রলার এসে দাঁড়ায়। কিছু লোক এসে ট্রলারটির লোকজনকে ছিনতাই করে তাদের ট্রলারে উঠাতে চায়। এতে ব্যর্থ হয়ে অপর ট্রলার থেকে আসা মানবপাচারকারীরা গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলে ট্রলারের মাঝিসহ পাঁচজন মারা যান।
তবে কতজন নিহত হয়েছেন তা জানাতে সরকারের সব দায়িত্বশীল ব্যক্তিই অপারগতা প্রকাশ করেন। সেন্টমার্টিন আসার পর অবশ্য পাঁচজন নিহতের কথা নিশ্চিত করে কোস্টগার্ড।
মোবাইল ফোনে অপর এক যাত্রী জানান, ট্রলারে মালিকপরে চারজন রাখাইন মাঝি রয়েছে। তারা আরো অবৈধ যাত্রী বহনের জন্য ট্রলারটি নিয়ে সাগরে অপেক্ষা করছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *