আমরা বসে বসে কলা খাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি: অলি

Slider রাজনীতি


ঢাকা: আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমরা বসে বসে কলা খাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।

আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের বাংলাদেশ, আসন্ন নির্বাচনে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কর্নেল অলি বলেন, বিএনপিকে বলেছি- জোটের প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে বানরের পিঠা ভাগ করার মতো করবেন না। যোগ্য প্রার্থীদের অবশ্যই মূল্যায়ণ করবেন। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমার দলের ৪৬ জন প্রার্থী ছিল।

কিন্তু আমি তাদের বলেছি যোগ্য প্রার্থীই কেবল নমিনেশন পাবে। বিএনপির পিঠে সোওয়ার হয়ে এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। যারা নমিনেশন পাবে তাদের অবশ্যই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকেই আমাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা সুযোগ খুজছে সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য। সরকারের পক্ষে কাজ না করে নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অলি বলেন, আমি আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি পুলিশ ও প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা এতোদিন সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন তারা নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আমরা ক্ষমতায় আসলে তাদের জন্য সমান সুযোগ থাকবে।

একই সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পরাধীন থাকতে হয়। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসলে এই সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি নিয়মিত ডিসকভারি দেখি। ছোট একটা বাঘ তার চেয়ে ১০গুণ বড় একটি হাতিকে ফেলে দেয়। এটা থেকে বুঝতে হবে আপনাদের কি করা উচিৎ। করণীয় একটাই। সেটা হল প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় যান। মা বোনদের বোঝান। তারা বের হয়ে এসে ভোট দিলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম বলেন, আসন্ন নির্বাচন হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও পুলিশের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে না। আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। পুলিশ ও আওয়ামী গুন্ডা বাহিনীর জন্য বাড়িতে থাকতে পারিনা। নিজের এলাকায় যেতে পারি না। নেত্রীকে জেলে রেখে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আর নয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে বলব- আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে দেশকে আর ধ্বংস করবেন না। আমরা মুক্তি চাই। কোন দেশের কাছে আমরা পরাধীন থাকতে চাই না। পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন, সেখানে গণতন্ত্র না থাকায় দেশটার কি অবস্থা হয়েছে। আমাদেরও তাই হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাকে রাস্তায় নামতে দেবে না। পুলিশ আছে। এসব ম্যানমেনে কথা বলার কোন সুযোগ নেই। আমি এমন কথা শুনতে চাই না। বাতাস অন্যদিকে বইছে দেখছেন না?

ঢাকার মিটিং, রাজশাহীর মিটিংয়ে দেখেননি। সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তার পরও মানুষ পায়ে হেটে সমাবেশে চলে এসেছে। ৬০ এর দশকে মাওলানা ভাসানীর ডাকে মানুষ যেভাবে এসেছে। এখনও সেভাবে মানুষ আসছে। যাদেরকে ভয় করেন, সেই বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে। তারা কোন পথে যাবে সেটার জন্য যোগাযোগ করছে। যখন বেনজির ও আসাদুজ্জামান মিয়ারা যোগাযোগ শুরু করেছে তখন ভয়ে সরকারের হাটু কাঁপা শুরু হয়েছে। বুঝতে পারছে তাদের ভীত নড়ে গেছে। এর পরও যারা এই সরকার ও প্রশাসনকে ভয় পান তাদের দিয়ে কিছু হবে না। কারণ ডাক্তারি ভাষায় একটা কথা আছে- ভয়ের কোন চিকিৎসা নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। তার জন্য সুবিচার চাই। কারণ সুবিচার হলেই তিনি মুক্তি পাবেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের কাছে গিয়ে বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার করে বলতে হবে। শ্রমিকরা মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতন পান। তাদের মজুরী বৃদ্ধি করা হবে। প্রত্যেকের জন্য রেশন চালু করা হবে। বিচারকরা ৬ মাস ঘুমান। এই জায়গায় ব্যাপক সংস্কার করা হবে। চিকিৎসা সেবার ব্যায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। এগুলো জনগণকে বুঝাতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা চেয়েছিলাম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পর নির্বাচনে যাব। কিন্তু এখন কি বলতে পারব আমরা নির্বাচন করব না? সরকার তো সেটাই চায়। তারা জানে নির্বাচনে লড়াই হলে জিততে পারবে না। এই জন্য সরকার যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আর আমরা যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় আসতে চাই। তিনি বলেন, এই সরকার কিন্তু মারাত্মক ধান্দাবাজ। চতুর। তারা বলছে- আসন্ন নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক আসতে পারবে কিন্তু তারা মুর্তির মতো দাড়িয়ে থাকবে। কোন রিপোর্ট তারা বাইরে পাঠাতে পারবে না। সরকারের উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আসন্ন নির্বাচন অনেক কঠিন। গত ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি যে ফোরটুয়েন্টি মার্কা নিবাচন হয়েছিল, তাতে যে ভারত সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছিল। তারাই এবার বলছে বাংলাদেশের আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সঙ্গে ভারত থাকবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার জন্য যে ২১ দিন সুযোগ পাব। তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশ চষে বেড়াব। আর জেলা পর্যায়ের নেতারা শুধু মানুষের বোঝাবে। মান্না বলেন, সরকার বলেছিল- ১৫ তারিখের পর কোন বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তার করা হবে না। কিন্তু করেছে। এখনো গায়েবী মামলা দিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে জনগণের মধ্যে এই সরকারের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ জমেছে। গত দুই তিন মাস আগেও মনে হতো শেখ হাসিনার মতো এতো বুদ্ধিমতি দুনিয়াতে আর হয় না। কিন্তু এখন আর তা মনে হয় না মানুষের। সামনে আমরা এমন কৌশল নেব। এমন লড়াই করব। যে সকার পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য আমরা নিজের পথ তো পরিষ্কার করবোই। খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করব। নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কমিশন সরকারের ক্রিড়ানক। দালাল। তারা নিজেরা স্বচ্ছ ব্যবস্থা তো করেই না। আমরা যখন অভিােগ করি তখন বলে, দেখছি বিষয়টি। আপার পরদিন দেখা যায় আমাদের অভিযোগ পাশ কাটিয়ে তারা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম বীর প্রতীক বলেন, সরকার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মারজিনালাইজ করে ফেলেছে। কারণ তারা নিজেরা রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি আওয়ামী লীগ নামক পুকুরে ডুবান্ত অবস্থায় আছেন। একটু শক্তি ব্যবহার করলেই আপনি শেষ। এসময় তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন মুখি আছি। নির্বাচন মুখি থাকতে চাই।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নেতকর্মীসহ রণঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *