রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি শুরু

Slider সারাবিশ্ব

কক্সবাজার: ১৫০ জনের প্রথম দলকে দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে ট্রানজিট ক্যাম্পের দিকে যাওয়া হচ্ছে। আজ সকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম এ তথ্য জানান।

আবুল কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমরা ট্রানজিট ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছি।’ প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা এখনই রাখাইনে ফিরে যেতে আগ্রহী নয় বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) গত দুই দিন ৫০টি রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি যাচাই–বাছাই চলছে। ঢাকায় থেকে খবর এলেই এক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য ৩০ পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আজ তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রস্তুতি তাঁদের আছে।

গতকাল সন্ধ্যায় ইউএনএইচসিআর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তারপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

গতকাল কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালামের সংবাদ ব্রিফিংয়েও এ অনিশ্চয়তার আভাস পাওয়া যায়। বিকেল পাঁচটার দিকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রথম দফায় ৩০টি রোহিঙ্গা পরিবারের ১৫০ জনকে প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনটি পেয়েছি। এ বিষয়ে মতামত জানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, ঘুমধুমের অন্তর্বর্তীকালীন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানোর কথা থাকলেও সেটা পুরোপুরি তৈরি নয়। ওই শিবিরে ৫৭টি ঘর তৈরি করে প্রতিটি ঘরে ১৫ জন রোহিঙ্গাকে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। যারা রাখাইনে যেতে আগ্রহী হবে, তাদের এখানে আনার কথা। যদিও গতকাল বিকেল পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও সেখানে দেখা যায়নি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, ইউএনএইচসিআরের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ায় ফেরত যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অন্তর্বর্তীকালীন শিবিরে রাখার পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় বাস ও ট্রাকে করে রোহিঙ্গাদের সরাসরি শিবির থেকে মিয়ানমার সীমান্তে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সিদ্ধান্ত নেয় যে নভেম্বরের মাঝামাঝি রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে রাখাইন পাঠানো হবে। এরপর থেকেই ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে ইউএনএইচসিআরসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে প্রত্যাবাসন হচ্ছে বলে ইউএনএইচসিআর অভিযোগ করে। তাদের দাবি, এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাদের আগে থেকে জানায়নি।

এ-সংক্রান্ত সরকারি চিঠিপত্রে দেখা গেছে, প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর দুদিন আগে, ২৮ অক্টোবর ইউএনএইচসিআরকে জানায় বাংলাদেশ। চিঠির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তালিকা দেওয়া হয়। ইউএনএইচসিআর মাঠে নামে ১৩ নভেম্বর। অর্থাৎ, রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি কি রাজি নয়, এটি জানার জন্য তারা দুই সপ্তাহের বেশি সময় নষ্ট করেছে। এর কারণ জানতে গতকাল ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা সাড়া দেননি।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান গত মঙ্গলবার তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, রোহিঙ্গা শিবিরের আশপাশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির উপস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রত্যাবাসন স্বেচ্ছায় না-ও হতে পারে।

কাদের নামের জামতলী শরণার্থী শিবিরের এক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের অনুমোদন করা তালিকায় নেই, এমন অনেক রোহিঙ্গাও পালিয়েছে। জামতলী ও হাকিমপাড়া শিবিরের প্রতিটি কোনায় সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। তাঁরা লোকজনকে তল্লাশি করছেন এবং ক্যাম্পের মধ্যে চলাফেরা করতে বাধা দিচ্ছেন। কেউ কেউ মাঝরাতে অন্য শিবিরের, বিশেষ করে কুতুপালংয়ের গোপন পথ ব্যবহার করে অন্য জায়গায় সরে পড়ছে, সেখানে তাদের প্রত্যাবাসনের ভয় নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আজ পরিকল্পনামাফিক শুরু নাও হতে পারে। গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে আজ থেকে প্রথম ব্যাচের রোহিঙ্গাদের পাঠানোর প্রস্তুতি শুরুর কথা। ইউএনএইচসিআর ও বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা এ পরিকল্পনার সঙ্গে সম্মত নয়। রোহিঙ্গাদের অনেকেই সেখানে স্বেচ্ছায় যেতে চাইছে না বলে তাদের সেখানে জোর করে না পাঠাতে অনুরোধ করেছে ইউএনএইচসিআর।

একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, ‘কেউ যেহেতু স্বেচ্ছায় যেতে চাইছে না, তাই বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে না।’ ওই সূত্র নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।

মিয়ানমারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘২ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। আমরা প্রস্তুত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *