সম্পাদকীয়: আম পারতে গিয়ে যেন ডাল ভেঙ্গে না যায়!

Slider বিচিত্র সম্পাদকীয়

উঁচু গাছের আগার আম পারতে গিয়ে গাছের চূড়ায় উঠতে হয়। পাকা আম পারতে হলে পাকা আমের নীচে কোন ডালে ভর করতে হয়। আম পারার ক্ষেত্রে বেশী উঁকি দিলে আমের পরিবর্তে মাটিতে পড়ে লাশ হতে হয়। কোন জীবিত মানুষ আম খেতে পারে কিন্তু মৃত মানুষ আম খেতে পারে না। কারো জীবনে এমন হয়ে থাকলে আর তার দৃশ্য দেখলে বা কেউ অনুধাবন করলে, সেও আর কোন দিন ঝুঁকি নিয়ে আম পারতে যাবে না। এটা স্বাভাবিক কথা। কিন্তু কেউ আম পারতে গিয়ে বেঁচে গেলে যদি সে আবারো তেমন ভাবে আম পারতে যায়, তবে তা হবে বোকামী এবং এমনটি উচিত নয় বলেই মনে করতে হবে।

আমাদের চলমান রাজনৈতিক অবস্থাটা অনেকটাই আম পারার মত। কারণ হিংসা হানাহানি করে আমাদের দুইজন মাননীয় নেত্রী জেল খেটেছেন। তারপরও তারা রাজনৈতিক মারামারি বন্ধ করেননি। করেই যাচ্ছেন। যে কোন ঘটনা নিয়েই শুরু হয় রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা যখন জাতির সামনে কথা বলেন, তখন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা জাতি কিন্তু তা জানেন। জেনে শুনে মিথ্যা বলাটা আমাদের অনেক রাজনীতিবিদদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের মিথ্যা কথাটাকে কতিপয় লোক মাথা নেড়ে সায় দেয়ায় মনে হয়, আমজনতা বোকা। আসলেই আমজনতা এখন বোকাই। কারণ জেনে শুনে বুঝে আমজনতাও অনেক সময় মিথ্যাকে সত্য বলে চাওড় করে বেড়ায়।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, রাজনীতি এখন একটি লাভজনক ব্যবসা। জিরো থেকে হিরো হওয়ার একটি উত্তম রাস্তা হল রাজনীতি। অধিক লাভজনক এই ব্যবসায় এখন হিড়িক পড়ে গেছে। সমাজে তৃতীয় পক্ষ বলতে যে একটি স্তর ছিল তাও এখন পক্ষীয় হয়ে যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না অন্য পেশার লোকজনও। সাহিত্য, সংস্কৃতি, সিনেমা, টিভি ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিরা শুধু নয়, ব্যবসায়ীরাও এখন অধিক ব্যবসার জন্য রাজনীতিতে আসছে দলে দলে। রাজনীতির মাঠে এখন জনস্রোত। শুধু নেতা আর নেতা। মনোনয়ন সংগ্রহের অবস্থা দেখলে মনে হয়, এমপি হওয়ার জন্য একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক ত্যাগী নেতা-কর্মীরা এখন পিছিয়ে পড়েছেন। কারণ রাজনীতি এখন টাকা ওয়ালাদের হাতে চলে যাচ্ছে আর ত্যাগী কর্মীর কাছে টাকা নেই। তাই তাদের রাজনীতিও নেই।

রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি না থাকার কারণে রাজনীতি ব্যবসার ধরণও পাল্টে যাচ্ছে। কারণ স্বর্নকার এখন কামার হয়ে যাচ্ছে ফলে বেকার হচ্ছে কামাররা।

রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি না থাকার কারণে রাজনীতিতে আসছে নতুন নতুন ইভেন্ট। অধিক লাভের আশায় রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারীরা এখন তাদের স্টাইলে রাজনীতি করছেন। কোন দলকে ক্ষমতায় আনছেন আবার কোন দলকে ক্ষমতা ছাড়া করছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীরা মিশে যায় সব সময়। কারণ তারা এসেছে ব্যবসা করার জন্য, রাজনীতি করার জন্য নয়।

রাজনীতিতে সুবিধাভোগীরা অনুপ্রবেশ করার কারণে বার বার আমাদের দেশে গণতন্ত্র হোঁচট খায়। এই হোঁচট খাওয়ার কারণে ত্যাগী কর্মীরা বিপদে পড়েন। যেমন বিপদে পড়েছেন এক নেত্রী আর লাভে আছেন আরেকজন। অবশ্য দুই জনই নিকট অতীতে বিপদে ছিলেন। এখন দুই জন দুই জায়গায় অবস্থান করার কারণে বিপদের কথা মনে নেই বলতে হবে। যদি থাকত তবে তাদের মধ্যে এমন মিল তৈরী হতো যেন রাজনীতিবিদদের হাতেই রাজনীতি থাকত।

সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানা ধরণের ঈঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বাইরে অন্যান্য দল বা জোট এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। নির্বাচন বা নির্বাচন পরবর্তি সরকার গঠনে তাদের ভূমিকা মূখ্যও হতে পারে। আর এমন হলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি।

তাই আম পারতে গিয়ে ডাল ভেঙ্গে যেন পড়ে যেতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ ডাল ভেঙ্গে পড়লে মৃত্যু হবে বা পঙ্গু হয়ে যেতে হবে।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *