মৃত ব্যক্তি তুললেন বয়স্ক ভাতার টাকা!

Slider গ্রাম বাংলা

মৃত ব্যক্তিও ব্যাংক থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা তুলে নেয়!এমন আজগবি ঘটনা ঘটেছে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলা রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকে। যে হিসাব থেকে টাকা তোলা হয়েছে তার নম্বর ১০১৯১।

আর এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কার্ড বিতরণকারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আ. কুদ্দুছ জানায়, সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বয়স্ক ভাতা কার্ডধারী ছইতন বেওয়া ২০১৭ সালে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের আবেদন করার পর ৫ মার্চ মারা যায়। কিন্তু ওই মহিলা মারা যাওয়ার পর কে বা কারা তার ছবি পাল্টিয়ে ও টিপসই জাল করে ছাইতন নেছা সেজে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এ বিষয়টি মৃত ছইতনের ছেলে শাহজাহানও কিছুই জানেন না। তবে তিনি সমাজসেবা অফিসে তার মায়ের কার্ডের খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন কার্ডটি উত্তোলন করা হয়েছে। তখন তিনি বিষয়টি জানার জন্য সোনালী ব্যাংকে গিয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।

সূত্র জানায়, ছইতন বেওয়ার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ডের বরাদ্দের টাকা ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ৭ হাজার ৮শত এবং একই বছরের ২৪ আগষ্টে দুই দফায় মোট ১০ হাজার ৮শ টাকা তোলা হয়। ইউপি সদস্যের দাবি মারা যাওয়ার আগে ছাইতন বেওয়া কোন টাকা ব্যাংক থেকে তুলতে পারেনি।

ঝিনাইগাতি সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার একেএম শরিফুল্লা জানায়, মৃত ব্যাক্তির টাকা উত্তোলন হয়েছে কিনা জানি না। আমরা সমাজ সেবার তালিকা অনুযায়ী ও কার্ড দেখে টাকা বিতরণ করে থাকি। এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালী আমরা কোন অভিযোগ পাইনি যে মৃত ব্যক্তির টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বা বিতরণ করা হয়েছে।

এ ব্যপারে ঝিনাইগাতি উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, আমার জানামতে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় দের বছরের টাকা বরাদ্দের পর ওই ব্যক্তি মারা যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম মৃত ব্যক্তির নামের কার্ডটি নিয়ে নমিনি’র হাতে তুলে দেন যাতে নিয়মানুযায়ী নমিনিরা টাকাগুলো পায়। কিন্তু তিনি কার্ড নিয়ে কি করেছে সেটা জানি না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, প্রায় দের বছর আগে আমাদের দলীয় ভাবে কিছু বয়স্ক ভাতার কার্ড বিতরণ করা হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবুর সুপারিশকৃত ওই কার্ডটি তার হাতে দেই এবং আমার পরিচিত কার্ডগুলো আমি নিজ হাতেই বিতরণ করি। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস পর লেবু ভাই (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) কার্ডটি আমার হাতে ফেরত দিয়ে বলেন, মহিলাটি মারা গেছে, তাই তার কার্ডটি অন্য কারো নামে বরাদ্দ দিয়ে দিও। এরপর আমি ওই কার্ডটি অন্যের নামে বরাদ্দ করে দিছি। কিন্তু ওই কার্ডের টাকা কে তুলেছে তা জানি না।

তবে এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু জানায়, আমি ওই দুস্থ ও সয্যাসায়ী বৃদ্ধার কার্ডের সুপারিশ করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর জানতে পারি তিনি কার্ডই পায়নি এবং আব্দুর রহিমই কার্ডটি তুলে তার কাছে রেখে দেয়। তার অভিযোগ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে ইউএনও, ব্যাংক কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের নিয়ে তদন্ত করা হবে।

সোনালী ব্যাংক শেরপুরের এজিএম একেএম সামছুল ইসলাম জানায়, বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতে কোন চেকের প্রয়োজন পড়ে না। সমাজ কল্যাণ অফিস থেকে তালিকা দেওয়া হয় সেই তালিকা অনুযায়ী ব্যাংক সুবিধা ভোগীর টিপ নিয়ে টাকা প্রদান করে। মহিলা মারা গেছেন এমন সংবাদ ব্যাংককে জানানো হয়নি। ছাইতনের নামে টাকা তোলা হয়েছে সত্য তবে কিভাবে কারা এই প্রতারণা ব্যাংকের সাথে করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ঘটনা সত্য উল্লেখ করে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা জানায়, মহিলা মারা যাওয়ার পর কিভাবে ছবি ও বয়স্ক ভাতার কার্ড জাল করে এই টাকা তোলা হলো তা মাথায় আসছেনা। তবে এ ধরনের জালিয়াতিতে তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলার সর্বত্র টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাপা এবং আপোষ মিমাংসা করার জন্য রাত থেকেই দফায় দফায় বৈঠক চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *