ময়মনসিংহ: ধর্মমন্ত্রীর ছেলে মোহিত উর রহমান ওরফে শান্তর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের সদস্য সাজ্জাদ আলম শেখ আজাদকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি হয়।
গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানায় নিহত সাজ্জাদের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার মামলাটি করেন।
গত ২ আগস্ট দিলরুবা যুবলীগের ২৫ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি। পুলিশের দাবি, মোহিত উর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি ও নির্দেশ দেওয়ার যে অভিযোগ, তা তদন্ত করে প্রমাণ পেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করবে।Eprothomalo
এ নিয়ে দিলরুবা আক্তারের পক্ষে দুজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট মামলাটি নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ পাওয়ায় গতকাল রাতে মামলা নেয় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা।
পুলিশ, দলীয় সূত্র ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরের আকুয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় যুবলীগের দুই পক্ষের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরে গত ৩১ জুলাই দুপুরে সাজ্জাদ আলম শেখ আজাদকে প্রতিপক্ষের লোকেরা প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় গত ২ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরের কালীবাড়ি এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে সাজ্জাদের পরিবার। স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরাও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে দিলরুবা বলেন, সাজ্জাদ একসময় মোহিত উর রহমানের পক্ষে রাজনীতি করতেন। বিভিন্ন সময় মোহিত তাঁকে দিয়ে অপরাধমূলক কাজ করাতেন। সাজ্জাদ অপরাধমূলক কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক মাস আগে মোহিতের পক্ষ ছেড়ে দেন। তিনি ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্ত পক্ষের একটিতে চলে যান। এতে মোহিত ক্ষেপে যান। এরপর থেকেই মোহিত সাজ্জাদকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। আকুয়া এলাকার মোহিতের পক্ষের যুবলীগ কর্মী ফরিদ শেখ ও ফরহাদের সঙ্গে সাজ্জাদ ও তাঁর পক্ষের কর্মীদের চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়।
সাজ্জাদের স্ত্রী বলেন, হত্যার আনুমানিক সাত দিন আগে মোহিত মোবাইলে সাজ্জাদকে হত্যার হুমকি দেন। মোহিতের নির্দেশেই প্রকাশ্যে সাজ্জাদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
হত্যার পর থেকেই সাজ্জাদের পরিবার ও তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে আসছিলেন। তাঁরা পুলিশের কাছে মামলা গ্রহণ ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। গত ৬ আগস্ট একই দাবিতে ময়মনসিংহ নগরীর কাচারি সড়কে অনুষ্ঠিত একটি মানববন্ধনে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যোগ দেন। তাঁরা মোহিতের নাম উল্লেখ না করলেও হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতার বিচার চান।
পুলিশ জানায়, মামলায় মোহিত ছাড়াও ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল পাঠান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মন্তু বাবু, যুবলীগের কর্মী শেখ ফরিদ, ফরহাদ ও সেলিম ওরফে চৌর্যা সেলিমসহ যুবলীগের মোট ২৫জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মোহিত উর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার কোনো ভিত্তি নেই। রাজনীতিতে যাঁরা তাঁকে প্রতিপক্ষ মনে করেন, তাঁরা যড়যন্ত্রমূলক তাঁকে অভিযুক্ত করছেন। তাঁরা নিহত সাজ্জাদের স্ত্রীকে উসকানি দিয়ে এ মামলা দিতে প্ররোচিত করেছেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, আজ বিকেল পর্যন্ত মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তবে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য কাজ শুরু করেছে।