জানা গেল নিনাদ খুনের রহস্য

Slider বিচিত্র

সেদিন ছিল ঈদুল ফিতর। চারদিকে আনন্দের আবহ।

শুধু অজানা আতঙ্কে রয়েছেন এক দম্পতি। স্বপন বেপারি ও তার স্ত্রী সোনিয়ার ঈদ নেই। পাগলের মতো চারদিকে খুঁজছেন শিশু সন্তান নিনাদকে। হঠাৎ খবর আসে নিনাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে। আট বছরের নিনাদের লাশ পাওয়া গেছে একটি সাইকেল ভ্যানে। ভ্যানের ভিতর মোটা পলিথিনে আংটার সঙ্গে ঝুলন্ত ছিল নিনাদের নিথর দেহ। যে পলিথিনের ভিতর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল নিনাদের লাশ সেই পলিথিনই পরে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে পথ দেখিয়েছে পুলিশকে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিবি পুলিশ তদন্তে নেমে খুঁজে পায় পলিথিনের সেই দোকানিকে। যার কাছ থেকে পলিথিনটি চেয়ে নিয়েছিলেন নিনাদের নানীর ভাই জহিরুল ইসলাম।

ওই পলিথিনেই নিনাদকে হত্যার পর লাশটি কাঁধে করে বহন করে ভ্যানগাড়িতে নিয়েছিলেন তিনি নিজেই। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীকেও খুঁজে বের করে ডিবি পুলিশ। ভ্যানের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে লাশ ঢুকিয়ে অন্য তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘাতককে চিহ্নিত করার পর এই হত্যাকাণ্ডে আর কে কে সহযোগিতা করেছে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পলিথিনসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জহিরুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিনাদের নানীর সঙ্গে জমি-জমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১৫ জুন রাত ৯টার দিকে খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভুইয়াপাড়ার ২১৫/৫ নম্বর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিনাদের আর খোঁজ মেলেনি। পরের দিন তার লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের একটি তালাবদ্ধ ভ্যানে। এ ঘটনায় নিনাদের বাবা স্বপন বেপারি অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। জানা গেছে, নিহত শিশু নিনাদের নানী ছালেহা বেগমের বড় ভাই জহিরুল। জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জহিরুলসহ অন্য ভাইদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল ছালেহা বেগমের পরিবারের। মেয়ে সোনিয়া ও জামাতা স্বপন বেপারি ছালেহা বেগমের বাড়িতে থাকেন। ছালেহা বেগমের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে তার ভাইদের বিরোধের কারণে নিনাদের বাবা ছালেহাকে সহযোগিতা করে আসছিলেন। এ কারণে নিনাদের পরিবারের প্রতি আক্রোশ জন্মে জহিরুল ইসলামের। সূত্র জানায়, জহিরুলের বাড়ি ও নিনাদদের নানী বাড়ির মাঝামাঝি সাদিকের মুদি দোকান। ১৫ জুন রাত ১২টার দিকে সেই দোকানে যান জহিরুল। এ সময় তিনি সাদিকের কাছে একটি বড় পলিথিন চান। সাদিক তাকে ১৫-২০টি চিপস রাখার একটি বড় পলিথিন দেন। পলিথিন নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরই সাদিক দেখতে পান তার দোকানের সামনে দিয়ে জহিরুল কাঁধে করে কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভাবেন পাশেই আবর্জনা ফেলার জায়গা সেখানে বাড়ির কিছু হয়তো তিনি ফেলতে যাচ্ছেন। সেই আবর্জনার কাছেই রাখা ছিল তিনটি সাইকেল ভ্যান। কিন্তু পরদিন নিনাদের লাশ পাওয়ার পর তিনি মূল ঘটনা বুঝতে পারেন। সেই সাদিকের সাক্ষ্যও নিয়ে রাখে পুলিশ। মামলাটি ডিডিতে স্থানান্তরের পর ডিবি কর্মকর্তারা জহিরুলকে আটক করে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জানা গেছে, আসামি তার অপরাধ স্বীকার করেননি। হত্যাকাণ্ডে সম্ভাব্য সহযোগীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় ডিবি পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *