‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’

Slider টপ নিউজ

‘আমার ভাই কবরে/খুনি কেন বাহিরে?’ এমন প্রশ্নবোধক চিহ্নের প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। একটু দূরেই আরেকজনের হাতে প্ল্যাকার্ড- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/যেথায় মানুষ মরে বাসের চাপায়, হাসে মন্ত্রীমণি।’ তার একটু পাশেই আরেক শিক্ষার্থীর গলায় ঝুলছিল পোস্টার- ‘বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা কি আছে?/ইয়েস অর নো?’

এমন সব প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বুধবার দিনভর মানিক মিয়া এভিনিউ অবরোধ করে রেখেছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘মা, তুমি আমার জন্য আর অপেক্ষা করো না, আমি আর ঘরে ফিরবো না।’

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘সার্থক জনম মা গো, জন্মেছি এই দেশে/গাড়িচাপায় মানুষ মরে, মন্ত্রী সাহেব হাসে!!!’ প্ল্যাকার্ড বহন করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছিল- ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই/ফাঁসি ছাড়া গতি নাই।’

রামপুরা এলাকায় এক ছাত্রীর গলায় পোস্টার ঝুলছিল- ‘ফোর জি স্পিড নেটওয়ার্ক নয়/ ফোর জি স্পিড বিচার ব্যবস্থা চাই’; ‘অনিশ্চিত জীবন চাই না’।

মতিঝিল এলাকায় দেখা গেল, সাদা ইউনিফর্ম পরা এক ছাত্র তার পেছনে কালি দিয়ে লিখেছে- ‘আমার ভাই ও বোনের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

প্ল্যাকার্ডে শিক্ষার্থীদের আহ্বান ছিল- ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আগে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ূন।’

গতকাল শিক্ষার্থীরা ঢাকার বিভিন্ন সড়কে মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির গাড়ি আটকেও প্রতিবাদ করেছেন। তারা জনপ্রতিনিধিদের গণপরিবহনে চলাচল করার দাবিও জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, এক ছাত্রের বুকে প্ল্যাকার্ড ঝুলছে- ‘জনপ্রতিনিধিদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হবে।’

বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদ বুধবার পুরো ঢাকা ছিল উত্তাল। বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে পুরো ঢাকা হয়ে পড়েছিল অচল।

রাজপথের এসব প্ল্যাকার্ড ঠাঁই পেয়েছে ফেসবুকের দেয়াল, প্রোফাইল পিক ও স্ট্যাটাসে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের ব্যবহূত এমন অনেক স্লোগান প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।

অতীতে বিভিন্ন আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন বক্তব্য লিখে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন বহন করেছেন। সেসব স্লোগানে উত্তাপ ছড়িয়েছে, মিছিল মুখরিত হয়েছে, উত্তাল হয়েছে রাজপথ। তবে কিশোর-কিশোরীদের নিষ্পাপ আদর্শবোধে প্রতিজ্ঞ এসব প্ল্যাকার্ড নতুন এক আবেদন বয়ে এনেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল স্কুল-কলেজের এ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের তিন দিনের মাথায় তাদের একটা প্ল্যাটফর্ম পাওয়া গেছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন।’ রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বুধবার শিক্ষার্থীদের কাছে এমন নামযুক্ত কিছু প্ল্যাকার্ড দেখা গেলেও এর সংগঠক কারা বা আদৌ আছে কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিমানবন্দর সড়কের ঘাতক বাসের চালক-হেলপার গ্রেফতার হয়েছে। বাতিল হয়েছে দুর্ঘটনায় দায়ী জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রুট পারমিট। গ্রেফতার হয়েছেন বাস মালিক।

এদিকে বুধবার যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী দাবি করেন, এখানে (শনির আখড়া) অসংখ্য মানুষের সামনেই তাদের ওপর একটা চলন্ত ট্রাক উঠিয়ে দেওয়া হয়। এতে এক ছাত্রের পা পিষ্ট হয়েছে। কখন যে তাদের ওপর গাড়ি উঠবে, তা তো তারা কেউই জানেন না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *