বিবিসির খবর: বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের আসাম ছাড়ার ‘অনুরোধ’ বিজেপি’র

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ নারী ও শিশু বাংলার মুখোমুখি রাজনীতি সারাদেশ সারাবিশ্ব

140604151712_assam_bd_muslim_hindu_304x171_bbc_nocredit
অমিতাভ ভট্টশালী

বিবিসি বাংলা, কলকাতা:  বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের আসাম ছাড়তে ‘অনুরোধ’ বিজেপি’র

মুসলিম ছাত্রদের একটি সংগঠন মুসলমানদের আসাম ছাড়ার কথার প্রতিবাদ জানিয়েছে

উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে আসা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের একবছরের মধ্যে রাজ্য ছাড়তে বলেছে সেদেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।

বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের রাজ্য ছাড়তে প্রথমে অনুরোধই জানিয়েছে বিজেপি, কিন্তু তাতে কাজ না হলে সরকারের ওপরে চাপ দিয়ে ওই অনুপ্রবেশকারীদের গ্রেপ্তার করানো হবে।

আসামের মুসলিম নেতারা বলছেন অনুপ্রবেশকারী বলে যদি বাঙালী মুসলমানদের হেনস্থা করা হয়, তাহলে তারাও পাল্টা আন্দোলন শুরু করবে।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের আসাম ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য একবছর সময় দিয়েছে। আর এই সময়ে বিজেপি’র কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলবেন।

আসামের জোরহাট থেকে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও দলের রাজ্যসহ সভাপতি কামাক্ষা প্রসাদ তাসা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতির ফলে আসামের গোটা শাসন আর সমাজ ব্যবস্থাটাই ভেঙ্গে পড়ছে। এঁদের আসাম ছাড়তেই হবে।

আমাদের অনুরোধ ওই সব অনুপ্রবেশকারীরা যেন সসম্মানে আসাম ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যান।

“বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতির ফলে আসামের গোটা শাসন আর সমাজ ব্যবস্থাটাই ভেঙ্গে পড়ছে। এঁদের আসাম ছাড়তেই হবে।”

আসামের জোরহাট থেকে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য কামাক্ষা প্রসাদ তাসা

রাজ্য সরকার এঁদের খোলা ছেড়ে রেখে দিয়েছে। তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্র জোরহাট – যার অধীনে যোরহাট আর শিবসাগর জেলাদুটি থেকে তো অনুপ্রবেশকারীদের যেতেই হবে”।

আসামের উগ্র জাতীয়তাবাদী ছাত্র আন্দোলনের পরে যে আসাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়, সেটা অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব মানুষ চলে এসেছিলেন আসামে, তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবেই গণ্য করা হয়।

কিন্তু তারপরেও নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে অভিযোগ করে থাকে অসমীয়া জাতীয়তাবাদী দলগুলোর মতোই বিজেপিও।

মি: তাসা বলেছেন, “ওই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই আমরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নেব না। প্রশাসনকে বলে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পোড়া হবে অনুপ্রবেশকারীদের।

অন্যদিকে রাজ্য সরকারের ওপরে চাপ বাড়ানো হবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এন আর সি হালনাগাদ করার জন্য।

এন আর সি হালনাগাদ করলেই বোঝা যাবে কারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছেন। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে পারবে সরকার”।

মি: তাসা আরও বলেছেন, এখন যেহেতু কেন্দ্রে বিজেপি’র ই সরকার, তাই রাজ্য যদি তাঁদের দাবী না মানে, তাহলে কেন্দ্রও অসহযোগিতা করতে শুরু করতে পারে।

“ওই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে অবশ্যই আমরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নেব না। প্রশাসনকে বলে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পোড়া হবে অনুপ্রবেশকারীদের”

সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে আসামে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী বারে বারেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ইস্যু তুলেছেন।

মি: মোদী আর তাঁর দল বিজেপি বলেছে যে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় ও সামাজিক অত্যাচারের কারণে যেসব হিন্দু পালিয়ে আসছেন ভারতে, তাঁদের শরণার্থী হিসাবে গণ্য করতে হবে কিন্তু যেসব বাংলাভাষী মুসলমান এসেছেন ১৯৭১ সালের পরে, তাঁদের বিতারিত করতে হবে আসাম থেকে।

রাজ্যের কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও সময়-সুযোগ মতো বাঙালী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় গিয়ে একই কথা বলে এসেছেন।

আসামের বাঙালী মুসলিম ছাত্রসংঠন এ বি এম এস ইউ’র নেতা রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, “শুধু বাংলাদেশী কেন, নেপালী, ভূটানীসহ সব বিদেশীদেরই চিহ্নিত করা হোক আর যারা অবৈধভাবে এসেছেন, তাঁদের তাড়ানো হোক। আমরা পূর্ণ সমর্থন করব। কিন্তু বিদেশী চিহ্নিত করার নামে যদি স্থানীয় মানুষদের, বাঙালী হিন্দু বা মুসলমানদের হেনস্থা করা শুরু হয়, তাহলে কিন্তু আমরাও পাল্টা আন্দোলন কর্মসূচী নেব”।

বাংলাভাষী মুসলমানরা আসামের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী যাঁরা বরাক উপত্যকায় যেমন থাকেন বিপুল সংখ্যায়, তেমনই বসবাস করেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আর ব্রহ্মপুত্রে জেগে ওঠা চরগুলিতে।

“বিদেশী চিহ্নিত করার নামে যদি স্থানীয় মানুষদের, বাঙালী হিন্দু বা মুসলমানদের হেনস্থা করা শুরু হয়, তাহলে কিন্তু আমরাও পাল্টা আন্দোলন কর্মসূচী নেব”

রফিকুল ইসলাম, আসামের মুসলিম ছাত্র সংগঠনের নেতা

১৮২৫ সাল নাগাদ থেকেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পূর্ববঙ্গের মুসলমান কৃষকদের নিয়ে আসতে শুরু করে চাষআবাদের উন্নয়নের জন্য।

কিন্তু পুলিশ বা বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সেই সব বাংলাভাষী মুসলমানদের নিয়মিত হেনস্থা করে অনুপ্রবেশকারী বলে – এমনটাই অভিযোগ মি. ইসলামের।

“এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বাঙলাভাষী স্থানীয় মুসলমানরা দিনমজুরী করতে গেছেন, আর প্রশাসন বা জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো তাঁদের কান ধরে ওঠ-বস করিয়েছে বা থানায় নিয়ে গেছে,” বলছিলেন রফিকুল ইসলাম।

মুসলিম নেতারা বলছেন যে কয়েক লক্ষ বাঙালী মুসলমানকে সন্দেহজনক ভোটার বা ডি ভোটার হিসাবে চিহ্নিত করার পরেও তার খুব সামান্য অংশকেই আসলে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়েছে এই বিষয়ে গঠিত বিশেষ ট্রাইবুনাল।

জনগণনার তথ্য উদ্ধৃত করে তাঁরা বলছেন যে অনুপ্রবেশের কারণে আসামে মুসলমানদের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে বলে যে প্রচার চালানো হয়, তা ভিত্তিহীন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদী দলগুলো এই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ইস্যু তুলে ধরেই একসময়ে সাফল্য পেয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে অসম গণপরিষদ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় সেই ইস্যু তুলে ধরে নির্বাচনী সাফল্য পেয়েছে বিজেপি।

আর ভোটের পরেও সেই নির্বাচনী ইস্যুই আবারও তুলে ধরে আসামের কংগ্রেসী সরকারের ওপরে চাপ বাড়াতে চাইছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *