খাঁচার পাখি কেন গান গায়

গ্রাম বাংলা ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি বাধ ভাঙ্গা মত বিনোদন ও মিডিয়া লাইফস্টাইল সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাবিশ্ব সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

মায়া আ্যাঞ্জুলুর
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: মায়া অ্যাঞ্জেলু (৪ এপ্রিল ১৯২৮—২৮ মে ২০১৪)সম্প্রতি মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কবি মায়া অ্যাঞ্জেলু । তাঁর জন্মনাম মার্গারিট অ্যানি জনসন। ১৯২৮ সালের ৪ এপ্রিল মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেইন্ট লুইতে যখন জন্ম হলো তাঁর, তখন চলছে দক্ষিণের মহামন্দা। বেঁচে থাকার জন্য মায়া অ্যাঞ্জেলু যৌনকর্মী, পতিতালয়ের মাসি, নাইট ক্লাবের নৃত্যশিল্পী, পাচক, অভিনেত্রী, রাজনৈতিক কর্মী, কবি ও আত্মজীবনীকার—সবই হয়েছেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কালো নারী বাস–কন্ডাক্টর। শুধু তা-ই নয়, ম্যালকম এক্স, মার্টিন লুথার কিংয়ের সহযোদ্ধা মায়া কালো মানুষের জন্য আরোপিত বন্ধ শৃঙ্খলও ভেঙেছেন।
জন এফ কেনেডির অভিষেকের দিন যেমন নিজের কবিতা পাঠ করে শুনিয়েছেন রবার্ট ফ্রস্ট, তেমনি বিল ক্লিনটনের প্রথম অভিষেকে ১৯৯৩ সালে আমন্ত্রিত হয়ে কবিতা পাঠ করেছিলেন এই কবি। এরপর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাত থেকে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম।
তাঁর সাত খণ্ড আত্মজীবনীর প্রথমটির নাম I Know Why The Caged Bird Sings. এর বাংলা করলে হয় ‘আমি জানি খাঁচার পাখি কেন গান গায়’। তাঁর একটি স্মরণীয় কবিতারও একই নাম ‘আমি জানি খাঁচার পাখি কেন গান গায়’।
আসুন, জেনে নিই এই কবির আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ডের একটি দুর্বিষহ স্মৃতিচিত্র: মায়ার বয়স যখন তিন বছর এবং ভাইয়ের বয়স চার, তাঁদের মা-বাবার বিয়েটা ভেঙে গেল। দুটো শিশুকে সঙ্গীবিহীন আরকানসাসের ট্রেনে তুলে দিলেন তাঁর বাবা—দাদির কাছে লালিত-পালিত হবে শিশুরা।
চার বছর পর না বলে–কয়ে বাবা এলেন এবং শিশু দুটোকে তুলে মিসৌরির সেইন্ট লুইতে মায়ের কাছে রেখে গেলেন। মা ভিভিয়ান ব্যাক্সটার জনসন তখন অর্থনৈতিক মন্দায় কষ্টকর দিন কাটাচ্ছেন। তত দিনে ভিভিয়ানেরও জুটেছে একজন বয়ফ্রেন্ড, ফ্রিম্যান নাম। মায়ার বয়স যখন আট বছর, ফ্রিম্যান ধর্ষণ করেন তাঁকে ।
মায়া বিষয়টি মাত্র এক বছরের বড় ভাইকে জানান। ভাই জানান পরিবারের অন্য সদস্যদের। ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন ফ্রিম্যান। কিন্তু এ অপরাধে মাত্র এক দিনের জেল হয় তাঁর। কারামুক্তির মাত্র চার দিন পর নিহত হন তিনি। অনুমান করা যায়, মায়ার চাচারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। ফ্রিম্যান নিহত হওয়ার পর প্রায় পাঁচ বছর নির্বাক ছিলেন মায়া অ্যাঞ্জেলু। তাঁর বিশ্বাস এমন, ‘আমি ভেবেছি আমার স্বর তাঁকে হত্যা করেছে, আমিই তাঁকে খুন করেছি। আমি ভেবেছি আর কোনো দিনই কথা বলব না, কারণ আমার কণ্ঠস্বর যে কাউকে হত্যা করতে পারে।’
বরেণ্য মানুষের মিছিলে পেশাবৈচিত্র্যে তাঁর সমকক্ষ আর কাউকে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। গত ২৮ মে ৮৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *