জীবিত বাবাকে মৃত দেখিয়ে আসামির জামিন

Slider বিচিত্র

233509_bangladesh_pratidin_thakurga

ঠাকুরগাঁও জেলা জজ আদালতে ‘বাবার মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র’ দেখিয়ে মাদক মামলার আসামি মাসুদ রানা বাবু (২৮) এর জামিন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাসুদ রানা বাবু (২৮) ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের চেংমারি গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ মার্চ বাবুকে তার বাড়ি থেকে ৫৫টি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ডিবি পুলিশের এসআই নূর আলম সিদ্দিক রাণীশংকৈল থানায় মাদক আইনে একটি মামলা করে। পরে মাসুদ রানা বাবুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। এরপর গত ১৮ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জেলা জজ আদালতে মাদক মামলার আসামি বাবুর জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী ফজলে রাব্বী বকুল। আইনজীবী আসামীর বাবা মোফাজ্জল হোসেনের ‘মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র’ ও মা রোকেয়া বেগমের ‘অসুস্থতার কাগজপত্র’ আদালতে দাখিল করেন। এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারক বাবুকে জামিন দেন।

উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম মুকুল স্বাক্ষরিত ওই প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়- তিনি বাবুকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এং জানেন। “সে অত্র ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। আমার জানা মতে তার বাবা মোফাজ্জল হোসেন গত ১৫/০৪/২০১৮ ইং তারিখে মারা গেছেন।

আমি মৃতের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। ”
কিন্তু চেংমারি গ্রামে বাবুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা বেঁচে আছেন, তবে তিনি অসুস্থ। বাবুর মা রোকেয়া বেগমও অসুস্থ। বাবুর স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে।
মোফাজ্জল হোসেন বলেন, “আমার ছেলে গোপনে মাদক ব্যবসা করে আসছিল। এ কারণে তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন কথা হয় না। কিছুদিন আগে ডিবি পুলিশ আমার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। ”

ছেলের জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বেঁচে আছি, আমি মারা যাইনি। আদালতে আমার মৃত্যু সনদপত্র জমা দেওয়া হয়েছে- এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। স্থানীয় চেয়ারম্যান, আইনজীবী বা আমার ছেলে আমাকে এসব বিষয়ে কিছুই জানায়নি। ”

একজন ব্যক্তি জীবিত থাকার পরও তাকে মৃত দেখিয়ে কেন প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হল জানতে চাইলে ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল টেলিফোনে বলেন, “বাবুর বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এটা আমি জানি। একজন লম্বা করে লোক আমার অফিসে এসেছিল বাবুর বাবার মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র নিতে। আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ব্যস্ততার মধ্যে আমি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়েছি। পরে জানতে পারি বাবুর বাবা বেঁচে আছেন। ”

এ বিষয়ে কথা বলতে বাবুর মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

তার আইনজীবী ফজলে রাব্বী বকুল বলেন, “প্রত্যয়নপত্র তো আসামি পক্ষ থেকে দিয়েছিল। আর সেটা তো চেয়ারম্যান দিয়েছেন; সেই প্রত্যয়নপত্র তো যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ”

তবে প্রত্যয়নপত্রটি ‘ভুল’ ছিল স্বীকার করে তিনি বলেন, “এরপর থেকে এ ধরনের প্রত্যয়নপত্র কেউ দিলে সেটা যাচাই করার চেষ্টা করব। ”

ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দাখিল করে আইনজীবী বকুল একজন মাদক কারবারির জামিন নিয়েছেন- এ অভিযোগ তিনি শুনেছে। আদালতে প্রত্যয়নপত্র দাখিল করার পর জামিন হয়েছে; এখানে আমাদের কিছুই বলার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীশংকৈলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী আফরিদা বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *