কি ঘটেছে সৌদি যুবরাজ সালমানের ভাগ্যে?

Slider সারাবিশ্ব

mohammad-bin-salman_1

সৌদি আরবের যুবরাজ, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি আল সৌদ রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তার পিতা বাদশাহ সালমানের পরেই তার ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই ক্ষমতাধর যুবরাজকে নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। কোথায় আছেন? কিভাবে আছেন আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক রহস্যময় পরিস্থিতি। গত কয়েক সপ্তাহে সৃষ্টি হওয়া এই রহস্যের জট এখনো পুরোপুরি খোলেনি। তাই সৌদির আগামীর বাদশা হতে যাওয়া যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়ে কৌতহুলটা রয়ে গেছে।

আরব ইন্টেলিজেন্সের বরাতে তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘কাইহান’ জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষের দিকে রাজপ্রাসাদে ভয়াবহ এক গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। এই সংবাদের যেমন পাওয়া যায়নি কোন আনুষ্ঠানিক ভিত্তি তেমনি এটি যে স্রেফ গুজব তেমন কোন শক্ত প্রমানও হাজির হয়নি। গত বৃহস্পতিবার ‘কাইহান’ এর সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটির এডিটর ইন চিফ হোসেন শরীয়তমাদারি জানান, ‘গত ২১ এপ্রিল রিয়াদের সংঘর্ষের সময়ে অন্তত দুটি বুলেট তার বুকে বিঁধেছে। এতে তিনি নিহত হয়ে থাকতে পারেন বলে একটি গোপন সূত্রের ভিত্তিতে আরব ইন্টেলিজেন্স দেশটির সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।’

তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত স্পর্শকাতর এ বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলছে, ‘সৌদি রাজপ্রাসাদের বাইরে তেমন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সেসময় আকাশে উড়া একটি অনিবন্ধিত খেলনা ড্রোনকে ভূপাতিত করার চেষ্টা করে নিরাপত্তারক্ষীরা।’

গত ১৮ মে যুবরাজ সালমানের নিজস্ব দপ্তর থেকে একটি ছবি টুইটারে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায় যুবরাজ সালমান মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসিসহ দু’জনের কাঁধে হাত রেখে গল্প করছেন। বাকি দু’জন হলেন আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং বাহরাইনের বাদশাহ বিন ইশা। ওই ছবি প্রকাশ করে সৌদি প্রিন্স বেঁচে আছেন এমন ইঙ্গিতই হয়তো দিতে চেয়েছে সৌদি।

কেন এই যুবরাজকে নিয়ে এমন গুঞ্জন? এমন রহস্যর কারণই বা কি সেটা জানা না গেলেও তার ক্ষমতা গ্রহণ আর উত্থানের গল্পটাও কিন্তু বেশ দাপুটে আর ঘটনা বহুল। ২০১৫ সালে তার বাবা যখন সৌদি আরবের বাদশাহ হন, তখন থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম আলোচনায় আসতে থাকে। ৩২ বছর বয়সী এ ব্যক্তি সৌদি আরবের ভেতরে উঠেন প্রবল ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন।

রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সে বছরেই ক্রাউন প্রিন্স মনোনীত হওয়া মুহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে বাদশাহ সালমান তার নিজ সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন। নায়েফ ছিলো সালমানের চাচাতো ভাই। বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৩১শে আগস্ট। তৎকালীন সৌদি প্রিন্স (বর্তমানে বাদশাহ) সালমান বিন আব্দুল আজিজ-এর তৃতীয় স্ত্রীর বড় সন্তান হচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে করেছেন। ২০০৯ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে তার বাবার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতার কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন। তখন তাকে মন্ত্রীর মর্যাদায় ক্রাউন প্রিন্স কোর্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ঠিক এর আগের বছর তাঁর বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আসীন হয়েছিলেন।

মোহাম্মদ বিন নায়েফের বাবা নায়েফ বিন আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর সালমান বিন আব্দুল আজিজ ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে আসীন হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মারা যাবার পর সালমান বিন আব্দুল আজিজ সৌদি আরবের বাদশাহ হন। তিনি ক্ষমতাসীন হাবার পর তাৎক্ষনিক-ভাবে দুটো সিদ্ধান্ত নেন এর মধ্যে একটি হচ্ছে, তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা।

তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাবার পরেই ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে শুরু হয় সামরিক অভিযান। ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালানোয় সৌদি আরব এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বাদশাহ সালমান তার ক্ষমতার উত্তরাধিকার হিসেবে বেশ নাটকীয় পরিবর্তন আনেন। মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়। একই সাথে তিনি সৌদি আরবের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান।

এরপর মোহাম্মদ বিন সালমান ২০৩০ সালকে লক্ষ্য করে সৌদি আরবের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ ঘোষণা করেন।

এদিকে প্রিন্স সালমান বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন সে বিষয়ে পরিস্কার ভাবে কোন শক্ত কোনো প্রমান উল্লেখ করা হয়নি সৌদির পক্ষ থেকে। সম্প্রতি প্রিন্স সালমানের আরো একটি ছবি প্রকাশ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। টুইটারে প্রকাশিত ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রিন্স সালমান অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন। সালমানের প্রেস মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বুধবার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে প্রেস মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল এ তথ্য জানালেও ওই মুখপাত্রের নাম প্রকাশ করেনি সংবাদ সংস্থাটি। এমনকি ছবিটি কবে প্রকাশ করা হয়েছে, সে বিষয়েও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন-এমন গুজবের মধ্যেই তার ছবি প্রকাশ করেছে সৌদি রাজ পরিবার।

একমাস ধরে জনসমক্ষে আসছেন না সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালামান। শুধু তাই নয়, সামাজিক মাধ্যমে তার কোনো ছবিও প্রকাশ হয়নি। তাই সঙ্গত কারণেই অনেকের মনেই প্রশ্ন এসেছে যে, মোহাম্মদ বিন সালমান কি আসলেই বেঁচে আছেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *