রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন ৬০ শিশু জন্ম নিচ্ছে

Slider নারী ও শিশু

117817_f5

ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০টি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। এর অর্থ হলো গড়ে প্রতি মাসে জন্ম নিচ্ছে ১৮০০ রোহিঙ্গা শিশু। বছরের হিসাবে তা দাঁড়ায় ২১ হাজার ৬০০। গত আগস্টে তারা বাংলাদেশে আসার পর এ পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে ১৬০০০ রোহিঙ্গা শিশু। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। ফেলিজ সলোমনের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী নৃশংসতা চালিয়েছে ৯ মাস আগে।

পরে তা অব্যাহত থাকে। এতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তারা ঠাঁই নিয়েছে গাদাগাদি করে গড়ে ওঠা আশ্রয় শিবিরে। এগুলো অস্থায়ী আশ্রয় শিবির। কিন্তু তার মধ্যেই গড়ে প্রতিদিন জন্ম হচ্ছে প্রায় ৬০টি শিশুর। বুধবার ইউনিসেফ বলেছে, গত বছর আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৬০০০ শিশু জন্ম নিয়েছে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের একজন প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেইগবেদার বলেছেন, নিজ দেশ থেকে দূরে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে প্রতিদিন জীবনের প্রথম নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রায় ৬০টি শিশু। তারা জন্ম নিচ্ছে সেইসব মায়ের গর্ভে যারা বাস্তুচ্যুত, সহিংসতার শিকার, আতঙ্কগ্রস্ত ও ধর্ষণের শিকার। সুষ্ঠুভাবে জীবনের সূত্রপাত ঘটার যে পরিবেশ এসব আশ্রয় শিবিরে সে পরিবেশ অনেক দূরে। টাইম ম্যাগাজিনের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর মিয়ানমারের আরসা কট্টরপন্থিদের হামলার জবাবে সেনাবাহিনী প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়। এ সময় ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, গুলি করে হত্যা সহ নৃশংসতা ঘটাতে থাকে তারা। এতে বাধ্য হয়ে প্রায় ৬ লাখ ৯৩ হাজার রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৫ হাজার। তাদের অনেকে আগের সহিংসতায় পালিয়ে এসেছেন। মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ লাখ। তাদের তারা সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী বিশ্বে। তাদের নেই কোনো নাগরিকত্ব। তাদেরকে মিয়ানমার দেখে থাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। তারা দাবি করে এরা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে মিয়ানমারে বসতি গড়েছে। আগস্টে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা শুরুর পর তাদের ভেতর থেকে প্রায় ৭ লাখ চলে আসে বাংলাদেশে। ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ, গণধর্ষণ, যৌন সহিংসতার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এর নিন্দা জানিয়েছে। প্রামাণ্য হিসেবে এসব ঘটনা সামনে তুলে এনেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বার্তা সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে হিউম্যান রাইটস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রয়টার্স সহ অনেকে। সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিচার করা হবে কিনা এ জন্য তদন্তের অনুমতি চাওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। এ জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ফোরটিফাই রাইটস এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছে। ইউনিসেফ বলেছে, যৌন সহিংসতার শিকার যেসব নারী ও বালিকা বেঁচে আছেন তারা সবচেয়ে বিপন্ন ও একপেশে অবস্থায় আছেন কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরগুলোতে। তাদের রয়েছে মানসিক ক্ষত। নির্যাতিত এসব নারী বা বালিকার অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহায়তা পাচ্ছেন না। গত সেপ্টেম্বর থেকে এখানে জন্ম নেয়া প্রতি ৫টি শিশুর মধ্যে একটির জন্ম হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় এমন স্থানে। ইউনিসেফ বলছে, ১৬০০০ শিশুর মধ্যে মাত্র ৩০০০ শিশুর জন্ম হয়েছে এসব স্থানে। নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ। যেসব নারীর চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রায় ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করেছে তারা। বেইগবেডার বলেন, নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশু, যারা ধর্ষণের কারণে জন্ম নিচ্ছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা অসম্ভব ব্যাপার। তবে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, যেসব মা সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন এবং প্রতিটি শিশু জন্ম নেয়ার পর যেন সহায়তা ও সেবা পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *