খুলনায় “ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারি” এর অভিযোগ পাল্টাপাল্টি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

173316bf4df1ecdf3c47230d404720c3-5af9726300916

খুলনা: খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন খালেক।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের ‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর।

বিএনপি প্রার্থীর সেই ‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘ওই অভিযোগ তো আমি করব। কারণ, ২০১৩ সালের নির্বাচনে আমার ছিল তালা মার্কা। বিএনপি ওই মার্কা ঝুলিয়ে সব জায়গায় ভোট দিয়েছে। এবারও শুনেছি তারা নৌকার ব্যাজ তৈরি করেছে। ওই ব্যাজ পরে তারা ভোটের দিন কাজ করবে।’

খালেক বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং তো আমি করি না। ইঞ্জিনিয়ারিং করে গতবার আমাকে হারানো হয়েছে। সেটা আজও দৃশ্যমান।’
খালেক বলেন, ‘২০০৮ সালে ১ লাখ ৫৮ হাজার ভোট পেয়েছি। ২০১৩ সালে হাজার কোটি টাকার কাজ করেও ১ লাখ ২০ হাজার ভোট পেয়েছি। ভোটে যে ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমাকে হারানো হয়েছে, তা পরবর্তী সময়ে জানতে পেরেছি। এই কাজটি যারা করেছে, তারা এখনো এই শহরে আছে।’

খালেকের দাবি, যদি ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করা হতো তাহলে ২০১৩ সালে তিনি হারতেন না। ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং আওয়ামী লীগ কখনো করে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মানুষের ভোটে বিজয়ী না হলে জবাবদিহি থাকে না বলে মনে করেন তিনি। এ কারণে তিনি জবাবদিহিতে বিশ্বাস করেন।

খুলনাবাসীর উদ্দেশে তালুকদার খালেক বলেন, ভোট মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রতি পাঁচ বছর পর পর মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়। সুষ্ঠুভাবে ভোট দেবে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন যেন হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি সে দাবি জানান তিনি।

প্রেস ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন খুলনার সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘আমি আগে পাঁচ বছর খুলনায় কাজ করেছি। এক জায়গার সংসদ সদস্য ছিলাম। সেখান থেকে পদত্যাগ করে এখানে এসেছি। আমি চাই, আমার দল চায় উন্নতি করতে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী ডেকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এই এলাকার উন্নয়ন করার জন্য। আমি যেন আমার শেষ জীবনটি এই এলাকার মানুষের সেবায় কাটিয়ে দিতে পারি, সবার কাছে সেই দোয়া চাই।’

কাল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং খুলনার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে তাদের মেয়র নির্বাচিত করবে, এই প্রত্যাশা করেন তিনি। জনগণ যে রায় দেবে, সে রায় মেনে নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার মতো কোথাও কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে দাবি তাঁর।

খুলনায় ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ মঞ্জুর

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনে সরকারি দল ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ মাধ্যমে ফল নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। আজ সোমবার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
636d88e677ea4b68f10e98f22c773e62-5af94d5a81535

নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, একটি সুন্দর নির্বাচনের ফলকে নিজেদের অনুকূলে নিতে মরিয়া সরকারি দল। সে জন্য নানা কৌশল নিচ্ছে তারা। রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। মঞ্জু আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোটের দিন সকালে রাস্তায় দৌড়ঝাঁপ করবে। মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক ছড়াবে। তারপর কেন্দ্র অন্যরা সিল মারবে। ভোটের দিন মাঠ খালি রাখতে আজ রাত থেকে ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে বলেও তাঁর কাছে খবর থাকার কথা জানান মঞ্জু।

বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু বলেন, এখন পর্যন্ত গণগ্রেপ্তার থামছে না। গত রাতেও ১৮ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মঞ্জু বলেন, এখন পর্যন্ত ১৩৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে গত এক সপ্তাহে আরও আড়াই শ নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করে বাণিজ্য করেছে পুলিশ। খালিশপুরে ছেলের জন্য বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিজের স্ত্রী, ভাই ও শ্যালকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করারও অভিযোগ করেন মঞ্জু।

মঞ্জু বলেন, নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মনে হয়েছে তিনি সফল। খুলনার মানুষ ও ভোটাররা ইশারা-ইঙ্গিতে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে, জনগণ বিএনপির পাশে আছেন। গত ১৫ দিনে দলীয় কর্মীদের ওপর ‘সিডর, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। তারপরও কর্মীরা মাঠ ছাড়েনি। সরকার ও পুলিশের ভূমিকাকে দানবীয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী।

নানা নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মঞ্জু বলেন, ‘যা কিছুই হোক, আমরা মাঠে থাকব। আওয়ামী লীগের রাজনীতির হিংস্র চেহারা জনগণ ও দেশবাসীকে দেখাতে চাই। আওয়ামী লীগ ও এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটাও জনগণের কাছে প্রমাণ করে দিতে চাই।’

বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু বলেন, ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পুলিশের এমন ন্যক্কারজনক আচরণ কখনোই দেখিনি।’ গতকাল খালিশপুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে একটি এলাকায় ঢুকতে পারেননি জানিয়ে মঞ্জু বলেন, সেখানে চাপাতি, চায়নিজ কুড়ালসহ মোটরসাইকেল মহড়া হয়েছে। পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ১২ মে রাতের পর বহিরাগতদের শহর ছাড়ার জন্য পুলিশি নির্দেশ থাকলেও এখনো অনেকে শহরে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো অ্যাকশন নেই।

নিজেকে রাজপথের কর্মী উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, খালেক সাহেব মন্ত্রী ছিলেন, এমপি ছিলেন, মেয়র ছিলেন। কিন্তু রাজপথের একজন কর্মীর কাছে হারের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে না পারায় কর্মীদের ওপর হামলা নির্যাতন হচ্ছে। এখানেই খালেক সাহেবের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে।

ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্র আসা এবং শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বান জানান মঞ্জু। সকাল থেকে এজেন্টরা ভোটকেন্দ্র থাকবে বললেও মঞ্জু বলেন, ‘তালিকায় অনেক ওলট-পালট হয়ে গেছে পুলিশের কারণে। তারপরও আমরা মাঠে থাকব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *