সারা দেশে বজ্রপাতে নিহত ২৯

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

116721_b3

বৃহস্পতিবার: সারা দেশে বজ্রপাতে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ৭, মুরাদনগরে ৩, সুনামগঞ্জে ২, মানিকগঞ্জে ২, কিশোরগঞ্জে ২, রাজশাহীতে ২, নীলফামারীতে ২, ময়মনসিংহে ২, সিরাজগঞ্জে ১, গাইবান্ধায় ১, নারায়ণগঞ্জে ১, নরসিংদীতে ১, জামালপুরে ১, কাপাসিয়ায় ১, গোয়াইনঘাটে ১ জন মারা গেছেন। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ ও বানিয়াচং এবং মাধবপুর প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ধান কাটা শ্রমিকসহ ৬ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে জেলার বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় বানিয়াচং উপজেলার সৈদরটুলা গ্রামের জয়নাল মিয়া নামে এক ধান কাটা শ্রমিক ঘটাস্থলেই নিহত হন। এ সময় তার সঙ্গে ধান কাটতে থাকা একই এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম (২২) আহত হন। অন্যদিকে দুপুরে উপজেলার মাকালকান্দি হাওরে স্বপন দাশ ধান কাটারত অবস্থায় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার সঙ্গে ধান কাটতে থাকা মাকালকান্দি গ্রামের দিপুল দাশ, একই গ্রামের বিষ্ণুপদ এবং দিরাই উপজেলার আরো দুই শ্রমিক আহত হন। একই উপজেলার নূরপুর হাওরে মিজানুর রহমান এবং জহুরুল মিয়া আহত হন।

এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের ইলামের হাওরে ধান কাটার সময় বৈলাকীপুর গ্রামের নরায়ন পাল ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ সময় একই ইউনিয়নের সরদারপুর হাবিবুর রহমান বজ্রপাতে আহত হন। এছাড়াও নবীগঞ্জ উপজেলার আমড়াখাই গ্রামের আবু তালিব পার্শ্ববর্তী হাওরে ধান কাটতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় একই উপজেলার গোলডুবা গ্রামের জসিম উদ্দিন এবং মার্কুলী এলাকার ইউনুছ মিয়া আহত হন।

অপরদিকে লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের হাওর থেকে গরু নিয়া বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে আহত হন ওই গ্রামের ছুফি মিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এছাড়াও মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের রামকুমার সরকারের ছেলে ধান কাটার শ্রমিক জহরলাল সরকার হাওরে কাজ করতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সোনারগাঁয়ে বজ্রপাতে মারিয়া আক্তার (কুলফি) (৮) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের তিলাব গ্রামে।

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় নিকলীতে শাহজালাল (২২) নামে এক পলিটেকনিক শিক্ষার্থী এবং পাকুন্দিয়ায় দিপালী রাণী বর্মন (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বজ্রপাতে এই দু’জনের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। নিহত দু’জনের মধ্যে শাহজালাল নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের ছাতিরচর বিজয়নগর গ্রামের মাঈন উদ্দিনের ছেলে ও কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীর তানোরে বজ্রপাতে দুই কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দুই জন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে উপজেলার পৃথক দুই স্থানে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

উপজেলার কামারগাঁ বাতাসপুর গ্রামের জমির মাঠে ধান কাটতে গিয়ে ওই গ্রামের ডোকমান আলী ছেলে আনছার আলী (৩০) বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আনন্দ শাহা (৩৫) ও টিল শাহা (৩০) নামে আরো দু’জন আহত হন।

অপরদিকে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল নামোপাড়া গ্রামের সামসুদ্দীনের ছেলে সোহাগ আলী (১৮) সকালে জমির মাঠে সেমিডিপের কাজ করছিল। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়।

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন এক স্কুল ছাত্রসহ দু’জন। এরা হলেন- উপজেলার তালুকনগর গ্রামের ষষ্ট শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম (১২) ও হাসাদিয়া এলাকায় কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ (৪৫)। বুধবার সকাল ও দুপুরে এই ঘটনাটি ঘটেছে।

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সিলেটের গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি কামারগাওয়ে বজ্রপাতে ১ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর ২টায় আকস্মিক বজ্রপাতে এ মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম নুরুল হক (৩০)। সে পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোড়ারগাঁও গ্রামের চন্ডু মিয়ার ছেলে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, কালবৈশাখীর ছোবলে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। বজ্রপাতে জলঢাকায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বুধবার সকালে আচমকাই কালবৈশাখীতে জেলা সদর, ডোমার, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। প্রচণ্ড বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টির সময় জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের মৃত-ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী আছমা খাতুন (৫০) এবং কাঁঠালী দেশীবাই এলাকার মৃত-রবিউল আলমের পুত্র নুরল আমিন (৪০) নিহত হয়েছে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় গতকাল সকালে একজন নিহত ও চার জন আহত হন। এ সময় বজ্রপাতে একটি দোকানঘর ভস্মীভূত হয়। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মেম্বার জয়নুল আবেদীন জানান, সকালে তার ইউনিয়নের মৌলভীর চর গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৭) বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশে ধানক্ষেত দেখতে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। পরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় সানন্দবাড়ী এলাকায় তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে জেলার মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর আমডাঙ্গা গ্রামে একই সময় বজ্রপাতে সিরাজুল ইসলামের একটি দোকানঘর ভস্মীভূত হয়। এ সময় বজ্রপাতে দোকানের পাশের বাড়ির মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রী মিছিরন নেছা (৩২) বজ্রপাতে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর বজ্রপাতে সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি চরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সমতুল্লাহ ওই ইউনিয়নের পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। আহত শাকিল মিয়া (১৫) খাস রাজবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।
নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ক’দিন পরেই চাকরিতে যোগদানের কথা ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহজালালের (২২)। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না আর। গতকাল দুপুরে ঘাতক বজ্রপাত কেড়ে নিয়েছে শাহজালালের প্রাণ। সে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের বিজয়নগর গ্রামের মঈনুদ্দিনের পুত্র।

স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহের ৫ উপজেলায় বজ্রপাতে ২ নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ সদর, ভালুকা, ফুলবাড়ীয়া ও হালুয়াঘাটে ও মুক্তাগাছা উপজেলায় এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

স্টাফ রিপোর্টার, গাইবান্ধা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের পশ্চিম ছালুয়া গ্রামের চরে বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। মৃত মহর আলী (৩৫) উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের চর কাবিলপুর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও শাল্লায় বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে জুয়েল আহমদ (১৬) ও শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে আলমগীর মিয়া (২২)।

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, যাত্রাপুরে বজ্রপাতে ৩ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলা ১০নং যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের দক্ষিণ পশ্চিমপাড়ার বিলে বোরো ধান কাটতে গিয়ে ২ জন যাত্রাপুর গ্রামে পূর্বপাড়া মৃত ফিরোজ মিয়ার ছেলে সেলিম (১৮) হামিদ মিয়ার ছেলে ইমন মিয়া (১৩) শ্রমিক নিহত হয়েছেন। অপর দিকে বজ্রপাত শব্দ শুনে ও দেখতে যাত্রাপুর মধ্যপাড়া বাজার পশ্চিম পার্শ্বেও আবু ইউসুফ মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ (২) ঘরের কাঠের জানালায় মাথা দিয়ে জানালা থেকে মাথা বের করতে না পেরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।

মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর মনোহরদীতে বজ্রপাতে পিয়ারা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার বড়চাপা ইউনিয়নের চরতারাকান্দি গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে। পিয়ারা বেগম চরতারাকান্দি গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী।
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, কাপাসিয়া উপজেলা শালদৈ গ্রামের মাদুলি বিলে বজ্রপাতে ধান কাটা শ্রমিক মমিনুল ইসলাম (৩৭)নিহত হয়। বজ্রপাতে একই দিন উপজেলা সদর ইউনিয়ন খোদাদিয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের ষাট হাজার টাকা মূল্যের ষাঁড় গরু নিহত হয়। ৯ এপ্রিল বুধবার বিকাল ২ টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *