‘ভুলে’ ভরা নথিকে ‘রহস্যজনক’ বলছে বিএনপি

Slider রাজনীতি

untitled-1_2197

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ইস্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম যে নথি দেখিয়েছেন তাকে ‘রহস্যজনক’ দাবি করে বিএনপি বলছে, তাতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নথিতে থাকা ‘অসংগতি’ তুলে ধরে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নথির যেসব স্থানে ‘ভুল’ করা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক বলেও দাবি মির্জা ফখরুলের।

তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন—পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে গতকাল সোমবার তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

গত সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম লন্ডনে বলেছিলেন, ‘২০১৪ সালের ২ জুন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও মেয়ের পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের কারও কাছে কোনো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই, যা দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসতে পারবেন।’

ঢাকায় ফিরে গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে তিনি তারেকের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের কপি এবং ব্রিটিশ হোম অফিসের একটি নথি দেখান। পাসপোর্ট হস্তান্তর মানে কি নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়া কি না, জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তা-ই মনে করি। বিদেশে আপনার পরিচয় হচ্ছে আপনার পাসপোর্ট। এটি ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে আপনি সেটি দাবি করছেন না। আমার হিসেবে তিনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের নাগরিক নন।’

বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি’। কিন্তু হবে ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এতে বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেওয়া আছে, যেটা ‘আনকমন’ (অস্বাভাবিক)। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। ‘ডিয়ার স্যার’ লেখার পরিবর্তে ‘ডিয়ার স্যারস’ লেখা আছে। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনোই লিখবে না। যিনি সই করেছেন, তার কোনো নাম নেই। এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। আর সংগত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন, তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্রেফ জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তার দ্বারা কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে যা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *