এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গা ৫০০০!

Slider জাতীয়

163856rohinga01

 

 

 

 

মিয়ামারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত পাঁচ হাজার এইচআইভি আক্রান্ত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৭ জনকে তলিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তবে প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে।

২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৬ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। পালিয় আসা যে ৯৭ জন রোহিঙ্গাকে এইচআইভি পজেটিভ বলে শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৫ জন শিশু, ৩৩ জন পুরুষ ও ৪৯ জন নারী।

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘আজকে (মঙ্গলবার) দিনের শেষে এই সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ”

তিনি আরো জানান, ‘‘যাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন নতুন আক্রান্ত। তাঁরা কক্সবাজারের ক্যাম্পেই আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা মিয়ানমারে থাকাকালীনই এইচআইভি পজেটিভ ছিলেন। ”

ইউনিসেফ এইডস বিশেষজ্ঞ ড. এম জিয়া উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘মিয়ানমারে এইচআইভি বহনকারীর সংখ্যা ০ দশমিক ৮ ভাগ।

সেই হিসেবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫ হাজার রোহিঙ্গা এইচআইভি আক্রান্ত। ”

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও কক্সবাজার এইডস সেন্টারের ফোকাল পয়েন্ট ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী। তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের ধারণা, পাঁচ হাজারেরও বেশি এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। মিয়ানমারে এইচআইভি আক্রান্তের হার বেশি হলেও সেটা সেন্ট্রাল মিয়ানমারে। আমরা মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে রোগীদের শনাক্ত করছি। আবার অনেকে যাঁরা রাখাইনে থাকতেই এইচআইভি পজেটিভ ছিলেন, তাঁরাও সেন্টারে গিয়ে রিপোর্ট করছেন। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আজকের যে সর্বশেষ হিসাব, তা কালকে বেড়ে যাবে। আমাদের হাতে প্রতিদিনই নতুন কেস আসে। তাই সেটা তালিকায় নিতে একটু সময় লাগে। ”

তিনি আরো বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আমরা এইচআইভি আক্রান্তরোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দিচ্ছি এবং কোনোভাবেই পরিচয় প্রকাশ করছি না। তাঁরা যাতে কোনোভাবে কোনো ধরনের সামাজিক সমস্যা বা ‘স্টিগমার’ শিকার না হয়, সেই ব্যবস্থা করছি আমরা। ”

তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশে ছয়টি এইচআইভি সেন্টার আছে যার মধ্যে একটি কক্সবাজারে। উখিয়া এবং কুতুপালং-এ ক্যাম্প পর্যায়ে যেসব মেডিক্যাল টিম কাজ করছে, তারা এইচআইভি শনাক্ত করার পর রোগীকে সেন্টারে নিয়ে আসে। আমরা তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নির্ধারণ ও কাউন্সেলিং করি। তাঁদের মাধ্যমে এইডস রোগ যাতেনা ছড়ায়, তার কাউন্সেলিংও করা হয়। তাঁরা যার যার ক্যাম্পেই থাকেন। তবে আমাদের মনিটরিং ও চিকিৎসা অব্যাহত থাকে। ”
তিনি জানান, ‘‘এইচআইভির পরই হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত রোগী নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। ”

রোহিঙ্গারা সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, এমনকি নানা রকমের চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। সবক্ষেত্রেই তাঁদের সরকারি-বেসরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সব রোহিঙ্গা রোগীদের জন্য উখিয়ায় ২৭টি ও টেকনাফে ১৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। রয়েছে গর্ভবর্তী মা ও নবজাতক শিশুদের জন্য বিশেষ চিকিৎসাও। হাম, যক্ষ্মা, পোলিও, কলেরা ও ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে টিকা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। কলেরা রোগ প্রতিরোধে ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে টিকা খাওয়ানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যেই। এছাড়া অপুষ্টিজনিত শিশুদের বিশেষ টিকা ও খাদ্য দেওয়া হয়েছে। ”

বাংলাদেশে ১২ থেকে ১৪ হাজার মানুষএইচআইভি ভাইরাস বহন করছে। এশিয়ান এপিডেমিক মডেল অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ০ দশমিক ০১ ভাগ। তবে বাংলাদেশে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৪,৭২১ জনকে। বাংলাদেশের তুলনায় মিয়ানমারে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আট গুণ বেশি।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘আমরা এইচআইভি পজেটিভ কোনো রোহিঙ্গা পাওয়ার পর তাঁর পুরো পরিবারকে কাউন্সেলিং-এর আওতায় আনি। সচেতন করি, যাতে এই ভাইরাস রোহিঙ্গা ক্যাম্প তো বটেই, লোকালিটিতেও ছড়িয়ে না পড়ে। এ জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাচ্ছে। ”

তিনি জানান, ‘‘যাঁদের আমরা শনাক্ত করতে পারছি তাঁদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। ”

ডা. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘‘তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ওয়ার কিছু নেই। কারণ এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। বাহ্যিক মেলামেশা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়ায় এই রোগ ছাড়ায় না। ”

– ডিডাব্লিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *