বায়তুল মোকাররমের সামনে বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ

Slider রাজনীতি

312675_181

রাজধানীতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিএনপির একটি বিক্ষোভ মিছিল লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিকভাবে পাওয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এনাম আহমেদসহ বিএনপি ৭ নেতাকর্মীকে আটকের তথ্য পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অবান্তর কথা বলছেন : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জিয়া পরিবারের কেউ বিদেশীদের বিয়ে করেননি। পৃথিবীর কোনো দেশে তারা কোনো নাগরিকত্ব গ্রহণও করেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে উড়ো, অবান্তর কথা বলেছেন, তার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রিজভী চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি বাংলাদেশী পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন। হাইকমিশন তো সরকারের অধীন, তাদের বলুন সেটি দেখাতে। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা-আত্মা বিক্রির সমতুল্য।

আজ সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ‘লন্ডন হাই কমিশনে নিজের পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। সে কিভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়’।

এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আসলেই সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অনর্গল মিথ্যা বলার যে একটি ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স’ সেটি আবারও প্রমান করলেন সেই কেন্দ্রের একজন সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে খুশী করতেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা কথাটি বলেছেন। পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারাই যাদের ছেলে মেয়েরা বিদেশীদের বিয়ে করে বিদেশেই নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। বিদেশেই বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকে। প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী গর্বের সঙ্গে নিজেকে বৃটিশ বলতেই ভালোবাসেন, বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে নয়।

আওয়ামী নেতারা নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশীদের সাথে বিয়ে দিয়ে আত্মস্লাঘা লাভ করেন। যারা বাংলা ভাষা, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে মার্কেটিং করতে সদা তৎপর, অথচ তারাই কোন চেতনায় বিদেশীদের কাছে সন্তানদের বিয়ে দিচ্ছেন, সেই চেতনাটি কী সেটি ক্ষমতাসীনদেরকে পরিস্কার করা উচিৎ।
পৈশাচিক একদলীয় শাসনের বর্বর আস্ফালনে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যাতনা দিচ্ছেন জনগণকে। যারা দেশের জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, বেগম পল্লী বানিয়ে গোটা পরিবারকে সেখানে প্রতিপালন করে, তারা আবার কিসের বাংলাদেশী ?

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জুলুম ও নিপীড়ণের বেড়াজালে দেশকে বন্দী করার জন্যই আজ আওয়ামী সরকার স্বৈরাচারী হিসেবে আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছে। মেগা প্রজেক্টের নামে দুর্নীতির টাকা আর সম্পদে ভরপুর হওয়াতে আন্তর্জাতিক দূর্নীতিবাজ হিসাবেও খেতাবপ্রাপ্ত। অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলে নিজেদের পাপকে ঢেকে রাখা যায় না, সেটি বিশ^ময় ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, জিয়া পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মাটি, পানি ও জলবায়ুর সন্তান। সরকারের চক্রান্তে মিথ্যা মামলায় পরিণতি কী হবে সেটি নিয়ে কোন চিন্তা না করে কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশনেত্রীর দেশে ফিরে আসার পর তাঁকে দেয়া হয় সরকারী ফরমানে প্রতিহিংসার সাজা। এখন কারাবন্দী থেকে অমানবিক জুলুম সহ্য করে যাচ্ছেন। অথচ দেশনেত্রী বিদেশে গিয়েও তিনি সেখানে থেকে যাওয়ার চিন্তা করেননি।

দেশনেত্রীর এই ভূমিকাই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিকের ভূমিকা। অথচ সেসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক আওয়ামী নেতারাই বলেছিলেন যে, বেগম জিয়া লন্ডন থেকে আর ফিরবেন না। কিন্তু তারা বেগম খালেদা জিয়াকে চিনতে পারেনি। দুর্জয় সাহসে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক মূর্ত প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথানত করেননি। দেশ থেকে প্যারোলে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনারই দৃষ্টান্ত।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আমি বলতে চাই-সরকারের ভাষ্য নিলে তো সেটি হবে তাদের একতরফা নির্বাচন, একতরফা অপশাসনের মতো একতরফা বাকশালী ভাষ্য।

হেফাজতের সমাবেশে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করলে সেই তালিকা দেওয়া যায় না, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যার তালিকাও তিনি প্রত্যাখান করেছেন। তাহলে এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন পারভেজ, সুমনসহ অসংখ্য বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীর সন্তানরা তাদের পিতার জন্য আকুতি করছেন, সেটি বিবেচনায় নিয়ে ‘হাসানুল হক ইনু সাহেব’ তাদের ফেরত দিচ্ছেন না কেন ? বিচার বহির্ভূত হত্যায় জনি, চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু, নড়াইলের তোহিদুল ইসলাম তানু, ঝিনাইদহের ইদ্রিস আলীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের আহাজারী কি তাহলে মিথ্যা?

তিনি আরো বলেন, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন ওই রিপোর্টে এস কে সিনহা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়, বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করেছেন। তথ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশে দুঃশাসন চলছে, মানবাধিকার শূন্য বাংলাদেশ। বিরুদ্ধ মত দমনে সর্বগ্রাসী নিষ্ঠুরতা প্রদর্শণ করা হচ্ছে।

আপনার ভাষায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেকে নিজেই বিতর্কিত করেছেন, তাহলো সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই প্রধান বিচারপতি বিতর্কিত হয়ে যাবেন ? আর এই কারনেই এস কে সিনহাকে আপনারা সন্ত্রাসী কায়দায় দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজ দেশে নেই কেনো? তাকে কিভাবে, কোন কর্মকর্তা অস্ত্র ঠেকিয়ে দেশ থেকে বের করেছিলেন, এটি কিন্তু কারো অজানা নয়।

রিজভী বলেন, আসন্ন সময়ে সবই প্রকাশিত হবে। বিশ্বদৃষ্টির সামনে সরকারের রক্তের হোলিখেলা ধরা পড়াতেই তথ্যমন্ত্রী চাকুরী বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন নিয়ে বিকারগ্রস্তের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বলেও রিজভী মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *