গোপালগঞ্জ বিভাগ বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে

Slider গ্রাম বাংলা

PHoto-11

এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ : লেখার শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত আমাদের জন্মভূমির ইতিহাসখ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের দীর্ঘায়ু কামনা করব। বলতে চাই গোপালগঞ্জ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এখানে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। টুঙ্গীপাড়ায় ঘুমিয়ে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির জন্য যে অতুলনীয় অবদান রেখে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ও এদেশের বাঙালি জাতিকে স্বাধীন জাতি হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দূর্লভ মর্যাদা দিয়ে গেছেন, তাঁর জন্মভূমিটি তাঁর নামেই পরিচিতি লাভ করবে এটাই স্বাভাবিক। এটি তাঁর কর্মের নূন্যতম স্বীকৃতি আর ইতিহাসের ন্যায্য দাবি। বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর বহু নজির রয়েছে সারা বিশ্বে। যুগে যুগে এই জনপদ নানা নামে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সময়ের ন্যায্য দাবী অনুযায়ী বাঙালি জাতির পিতার নামানুসারে তাঁর জন্মভূমি পরিচিতি লাভ করলে সেটাই হবে আমাদের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ইতিহাসের ন্যায্য দাবীও এতে প্রতিষ্ঠিত হবে।

গোপালগঞ্জ এর নাম পরিবর্তন করে মুজিবগঞ্জ বিভাগ ঘোষণা করা এখন আর শুধু দাবি নয়, এটি এখন একটি ন্যায্য গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। কোন দয়া বা দানের বিষয় ও ইহা আর নয়, যৌক্তিক কারনে গোপালগঞ্জ এর নাম পরিবর্তন এবং বিভাগ দাবি করা হচ্ছে । আমরা মনে করি বিভাগ গঠন শুধু কোন অঞ্চলের মানুষের স্বার্থে করা হয় না। সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুবিন্যাসের জন্যই বিভাগ বেশী জরুরী। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত জেলা হচ্ছে গোপালগঞ্জ।

ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জে স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ সাহেরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল,শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটসহ অনেক গুলো উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। তাই সময়ের দাবি এখন গোপালগঞ্জ কে বিভাগ ঘোষনা করা হোক।

গোপালগঞ্জ বিভাগ ঘোষিত হইলে উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা যে বৃদ্ধি পাইবে শুধু তাহাই নহে, অন্যান্য বিভাগের মতো এই অঞ্চলকেও নির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় এনে দেশ ও মানুষের সার্বিক উন্নয়নের মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। তাই কেবল আঞ্চলিক স্বার্থেই নয়, দেশের প্রয়োজনে গোপালগঞ্জ এর নাম পরিবর্তন করে অবিলম্বে বিভাগ ঘোষনা করা উচিত। গোপালগঞ্জের মতো ইতিহাস, ঐতিহ্যের দিক হইতে এই জেলাকে বিভাগ ঘোষণা করা এখন একেবারেই ন্যায্য দাবি । এই দাবি সহসা পূরন না হইলে আঞ্চলিক বৈষম্য ও ব্যবধান ক্রমেই আরও বাড়তে থাকবে। এই অঞ্চলের মানুষ মৌলিক চাহিদা ও অধিকারের প্রয়োজনীয় সুযোগ হইতে বেশী বঞ্চিত হইবে।

আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি বাঙালি ও বাংলাদেশ নামটির সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে চিরস্মরণীয় ও একাকার হয়ে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। তথাপি এ কাজটি এখন সময়ের খুবই ন্যায্য দাবী। কারণ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সরকার গঠিত হয়েছিলো যে স্থানে সে স্থানের নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা যা সেদিন থেকে মুজিব নগর নামে পরিচয় লাভ করে। তেমনি এদেশের সামরিক শাসকগণ ও তাদের শাসনামলে এদেশের বহু স্থানের নামকরণ করেছেন জিয়া নগর, এরশাদ নগর, এমনকি পাকিস্তানি অনেক শাসকদের নামেও এদেশে এখনও রয়েছে বহু স্থান, মহল্লা, রাস্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম।

স্থানের নাম পরিবর্তন বা সংস্কার ইতিহাসের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যুগের প্রয়োজনে যা ঘটে থাকে।
যে অঞ্চলে আমাদের জাতির পিতার জন্ম সে ভূখন্ডের মানুষকে আজ এদেশের স্বাধীনতা বিরোধীচক্র গোপালী বলে গালি দেয় বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, এর চেয়ে দূর্ভাগ্য জনক আর কি হতে পারে ? প্রশ্ন রেখে গেলাম ! “গোপাল কে? তিনি কি বঙ্গবন্ধুর চাইতে বিখ্যাত যে, তার নামে এলাকার নাম হতে হবে?” প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে গোপালগঞ্জের নাম মুছে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। কিন্তু কত বড় অকৃতজ্ঞ ও আহম্মক হলে একথা কেউ বলতে পারে। কারণ অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করলেও তার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যে কোন ভাবেই পরিবর্তন করা যায় না তা তাদের বোধগম্য নয়। বিদ্যা-বুদ্ধি ও যথাযথ জ্ঞানের চরম অনটন থাকলে এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা কেউ বলতে পারে ?

তাছাড়া গোপালগঞ্জের নাম সম্ভাব্য যাদের নামানুসারে নামকরণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বাঙালি জাতির জন্য, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তাদের এমন কোন অবদান নেই যা বঙ্গবন্ধুর সাথে কোন ভাবেই তুলনার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান তাদের তুলনায় লক্ষ কোটি গুণ বেশি।
যেহেতু গোপালগঞ্জের পূর্ব নাম ছিলো রাজগঞ্জ সেহেতু এদেশের গণমানুষের রায়ে ও ভালবাসায় সিক্ত তাদের হৃদয়ের মণি কোঠার সিংহাসনে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই ছিলেন ও আছেন! এদেশের মানুষের কাছে রাজা-রাজাধিরাজ! পূর্বের সেই রাজগঞ্জই এদেশের প্রকৃত রাজার নামে মুজিবগঞ্জ হবে এটাই এদেশের আপামর বাঙালির প্রত্যাশা, অভিমত ও ইতিহাসের ন্যায্য দাবী। তাছাড়া গোপালগঞ্জের মাটিতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এবং তাঁর সমাধিসহ অন্তত সাত পুরুষের সমাধি রয়েছে এখানে। এ বিষয়ে শুধু গোপালগঞ্জের সচেতন নাগরিকদের পক্ষেই নয় এদেশের বিবেকবান, কৃতজ্ঞ, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের পক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সনির্বন্ধ আবেদন জানায় যে, বর্তমান সরকারের শাসনামলেই এই ঐতিহাসিক কাজটি অর্থাৎ গোপালগঞ্জের নামটি মুজিবগঞ্জ এবং মুজিবগঞ্জ কে অবিলম্বে বিভাগ ঘোষণা করা হোক ।

আমাদের দেশটি ছোট। এখানে প্রদেশ গঠনের সুযোগ যেহেতু নেই তাই বিভাগীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, বাগেরহাট সহ যদি মুজিবগঞ্জ বিভাগ গঠন করা হয় তাহলে কেবল ঢাকা বিভাগ বাদে বাকি সব বিভাগ গুলোই জল অথবা স্থল কোনো না কোনো সীমান্ত পাবে। এতে করে আমাদের সীমান্তের সম্পদ রক্ষা ও প্রতিরক্ষার বিষয়টিও জোরদার হবে।

পরিশেষে, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে গোপালগঞ্জ অবহেলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার কারণে গোপালগঞ্জ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন মুলক কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ বাসীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি জাতির জনকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গোপালগঞ্জ জেলাকে মুজিবগঞ্জ করে অবিলম্বে বিভাগ ঘোষণা করা হোক! হোক! হোক!

প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন মুজিবগঞ্জ নামকরণ করে বিভাগ ঘোষণা সময়ের দাবিকে ইতিহাসের পাতায় স্থান দিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা গোপালগঞ্জবাসী আশাবাদ ব্যক্ত করছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের পক্ষ থেকে দেশবাসী সকলকে রক্তিম গোলাপের শুভেচ্ছা, সকলের সুস্বাস্থ ও দূর্ঘায়ু কমনা করে এখানেই বিদায় । জয় বাংলা ! আল্লাহ হাফেজ !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *