অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশীর মৃত্যু : বাড়িতে শোকের মাতম

Slider সারাবিশ্ব

306700_15

 

 

 

 

অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন বাংলাদেশির মধ্যে দু’জনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। তাদের দুজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত সাইফুল ইসলাম দিনার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়ি মজলিস গ্রামের মাজহারুল ইসলামের ছেলে ও সাদেকা কামাল নিপা একই ইউনিয়নের বড়নগর গ্রামের মোস্তফা কামাল বাবুলের মেয়ে ও রহমতপুর গ্রামের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সোহানের স্ত্রী।

রোববার বিকেলে নিহত সাইফুল ইসলাম দিনার ও সাদেকা কামাল নিপার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের মৃত্যুতে পুরো পরিবারবারসহ আত্মীয় স্বজন শোকে কাতর হয়ে আছে। এ খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা বাড়িতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।

কথা হয় দিনারের ঘনিষ্ট বন্ধু মাহফুজুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, ২০১৩ সালে দিনার স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। সেখান তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি চাকুরি করেন। সম্প্রতি তার স্ত্রী সায়মা আক্তারকেও তিনি অষ্ট্রেলিয়া নিয়ে যান। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দিনার সবার ছোট।
তিনি মোগরাপাড়া এইচজিজিএইচ স্মৃতি বিদ্যায়তন থেকে এসএসসি ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ইষ্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দিনারের স্ত্রী সায়মা আক্তার গুরুতর আহত হন। দিনারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা মাজহারুল ইসলাম কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। পাশের দুটি কক্ষে তার বোন, মা ও স্বজনরা শোকে কাতর হয়ে বিলাপ করছেন।

অপর দিকে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বড়নগর গ্রামের সাদেকা কামাল নিপার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বাবুল খাটে শুয়ে মেয়ের জন্য কান্না করছেন। পাশের কক্ষে তার মা সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মী মাকসুদা কামাল তার মেয়ের জন্য বিলাপ করে কান্না করছেন। পাশে স্বজনরা নিপার মাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কোনভাবেই তার মেয়ের অকাল মৃত্যু সহ্য করতে পারছেন না মা মাকসুদা কামাল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাদেকা কামাল নিপার বাবা মোস্তফা কামাল বাবুল বলেন, পাশ্ববর্তী গ্রামের রহমতপুর গ্রামের আবুল হোসেন প্রধানের ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সোহানের সঙ্গে ৫ বছর আগে বিয়ে হয়। তার মেয়ের জামাই সোহান গত সাড়ে তিন বছর আগে অস্ট্রেলিয়া নিপাকে নিয়ে যান। আগামী মে মাসে ওই দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে দেশে আসার কথা ছিল। আমার মেয়ে এখন লাশ হয়ে ফিরছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাগরিকত্বের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল। আগামী মাসে হয়তো নাগরিকত্ব পেয়ে যেতো নিপা।

তিনি আরো জানান, দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিপা সবার ছোট। বড় ভাই বোন আমেরিকা প্রবাসী। নিপা মোগরাপাড়া এইচজিজিএইচ স্মৃতি বিদ্যায়তন থেকে এসএসসি ও সোনারগাঁও ডিগ্রী কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স পাস করে। পরবর্তীতে তার স্বামী সোহানের সাথে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। নিপার মৃত্যুতে তার শশুরবাড়ি রহমতপুর গ্রামেও শোকের মাতম চলছে।

গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে তাদের বহন করা গাড়িটি ইউটার্ণ করার সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে সড়কের মধ্যে বেশ কয়েকবার উল্টে গেলে ঘটনাস্থলেই তিনজন বাংলাদেশী নিহত হন। নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে।

dav

 

 

 

 

 

 

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠন থেকে ১২ জনের একটি দল ইস্টার হলিডের ছুটি কাটাতে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। তারা সকলেই চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্য ছিলেন। ভাড়ায় চালিত দুটি গাড়ি করে যাত্রা করেছিলেন তারা। এর মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটির চালকের আসনে থাকা তাদেরই সহযাত্রী সাইফুল ইসলাম দিনারসহ যাত্রীর আসনে থাকে সাদেকা কামাল নিপা ও মাইশা কুদ্দুস ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ছাড়া বাকিরা গুরুতর আহত অবস্থায় এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *