চিরনিদ্রায় শায়িত কাকন বিবি

Slider সারাদেশ সিলেট

38923f9017ccfbc58c2ba82a32bfeb0e-5ab38aba7c5d3

সুনামগঞ্জ: কাকন বিবিনারী মুক্তিযোদ্ধা ‘বীর প্রতীক’ কাকন বিবির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জিরাগাঁও গ্রামে নিজ বাড়ির আঙিনায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি গতকাল বুধবার রাত ১১টায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সুনামগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী জানান, কাকন বিবির মরদেহ আজ বেলা একটায় সিলেট থেকে তাঁর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এরপর জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বেলা তিনটার দিকে গ্রামের মাঠে তাঁকে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়। এরপর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক জানান, কাকন বিবি ছিলেন খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোক। এলাকায় তাঁর পরিচিতি ছিল ‘খাসিয়া মুক্তি বেঠি’ হিসেবে। তাঁর স্বামী আবদুল মজিদ খান ইপিআর সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নিখোঁজ হন। এরপর স্বামীর খোঁজ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা কাকন বিবি মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি কোনো স্বীকৃতি পাননি। পারিবারিক টানাপোড়েনে তিনি শ্রমজীবীর কাজ ও ভিক্ষাবৃত্তিও করেছেন। ১৯৯৭ সালে তাঁর বীরত্বগাথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তাঁকে ঢাকায় ডেকে নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন সংবর্ধনা দিয়ে তাঁকে বিশেষ ‘বীর প্রতীক’ ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি এখনো গেজেটভুক্ত হয়নি।

সুনামগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক বজলুল মজিদ চৌধুরী জানান, কাকন বিবি সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। প্রথম দিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খবর সংগ্রহ করে দিতেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের সময়ে তিনি একবার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এ সময় তাঁকে চরম অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়।

কাকন বিবির মেয়ে সখিনা বেগম জানান, তাঁর মা বেশ কিছুদিন ধরেই নানা শারীরিক রোগে ভুগছিলেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। পরে রাত নয়টায় তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল রাত ১১টায় তিনি মারা যান।

সিলেট এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) বিভাগীয় প্রধান সব্যসাচী রায় জানান, কাকন বিবি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *