শুধু মৃত্যুই থামাতে পারে সৌদি যুবরাজকে

Slider লাইফস্টাইল

bd0f4a2d67300b24e441d5eccee340c0-5aafdfcec276e

 

 

 

 

ঢাকা:  বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্পর্কে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, ‘আমি একজন ধনী মানুষ, গরিব নই। আমি গান্ধী বা ম্যান্ডেলাও নই।’ যুক্তরাষ্ট্র সফররত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। তাঁকে কীভাবে থামানো যাবে—প্রশ্নের জবাবে সৌদির মসনদে বসতে যাওয়া সালমান বলেন, ‘মৃত্যুই শুধু’ তাঁকে থামাতে পারে।

প্রথমবারের মতো মার্কিন সংবাদমাধ্যম টিভি চ্যানেল সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিট’ নামের অনুষ্ঠানে দেওয়া ৩২ বছর বয়সী যুবরাজের সাক্ষাৎকারটি গত রোববার প্রচারিত হয়।

সাক্ষাৎকারে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনৈতিক ইস্যু, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক, সৌদির রাজপরিবারে ক্ষমতার চর্চা, চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং নারীর স্বাধীনতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন সালমান। ক্ষমতাধর এ যুবরাজ নারীর অধিকার, পোশাকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, নারীদের গাড়ি চালানোর স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সংস্কারসহ নানা বিষয়ে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেন।

ইসলামের নারী-পুরুষের অবস্থা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে উগ্রবাদীরা আছে, যারা দুটি লিঙ্গের মধ্যে মেলামেশাকে নিষিদ্ধ বলে। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি মানতে পারে না তারা। পুরুষ ও নারীর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে অক্ষম তারা। এ রকম অনেক ধারণা মহানবী হজরত মুুুহাম্মদ (সা.)-এর সময়কালের জীবনযাপনের একেবারে বিপরীত। আমরা সবাই মানবজাতি এবং সেখানে কোনো পার্থক্য নেই।’

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হবে যুবরাজের
আগামীকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ। ট্রাম্পের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের বৈঠকে ইরান, সৌদি আরবের সামাজিক নানা পরিবর্তন, ইয়েমেন যুদ্ধ, কাতারের সঙ্গে চলমান কূটনৈতিক টানাপোড়েনসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গান্ধী বা ম্যান্ডেলা নই
ফ্রান্সে যুবরাজ মোহাম্মদের বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল প্রাসাদ থাকার খবর প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক টাইমসে। তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্পর্কেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়। এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার সম্পদ থাকার বিষয়টি ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি একজন ধনী ব্যক্তি, গরিব নই। আমি মহাত্মা গান্ধী বা নেলসন ম্যান্ডেলাও নই। আমি আমার ব্যক্তিগত আয়ের ৫১ শতাংশ মানুষের জন্য ও ৪৯ শতাংশ নিজের জন্য ব্যয় করি।’

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অর্থ উদ্ধারে নয়, বার্তা দেওয়া
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন সৌদি যুবরাজ। এ অভিযানে সৌদি আরবের কয়েকজন যুবরাজ, ব্যবসায়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আটক করা হয়। এই অভিযানকে যুবরাজ মোহাম্মদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার হাতিয়ার বলেও ধরা হয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অবৈধভাবে জোগাড় করা ১০০ বিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। এ অভিযান অর্থ উদ্ধারের জন্য নয়। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেওয়াই ছিল এ অভিযানের উদ্দেশ্য। দুর্নীতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের এ বার্তা দেওয়া যে সবাইকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।

মৃত্যুই থামাতে পারে যুবরাজকে
সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদই এগিয়ে রয়েছেন। যুবক মোহাম্মদ ক্ষমতায় এলে অর্ধশতাব্দী বা এর বেশি সময় সৌদি আরব শাসনের সুযোগ পাবেন। তাঁকে কীভাবে থামানো যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সৌদির মসনদে বসতে যাওয়া সালমান বলেন, তাঁকে থামাতে পারে ‘শুধু মৃত্যুই’।

যা করতে চান যুবরাজ
মোহাম্মদ বিন সালমানের আশা, সৌদি আরবে এমন এক প্রক্রিয়া চালু থাকবে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করবে। বিশ্ববাজার-ব্যবস্থায় উৎপাদন ও জোগানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতির নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হবে। একটি উন্নত সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যেতে বদ্ধপরিকর যুবরাজ।

ইতিমধ্যে সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন সালমান। আর্থসামাজিক সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে বিনোদন খাতে বিপুল অর্থের বিনিয়োগ হচ্ছে দেশটিতে। নারীবান্ধব বিভিন্ন আইন প্রণয়ন আর সামাজিক সংস্কারের কারণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পাচ্ছেন সালমান। তাঁর নেতৃত্বেই বদলে যাচ্ছে সৌদি আরব।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, সিনেমা হলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে নানান কারণে সমালোচনার মুখে পড়া সালমানের সময়ে হলে গিয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন হচ্ছে, ফ্যাশন শো হতে যাচ্ছে, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনকে উৎসাহিতও করা হচ্ছে।

সৌদিতে এখন নারীরা সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালাতে পারেন, ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো জায়গায় যেতে গাড়ি চালাতে পারবেন। গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নারীদের পুরুষ অভিভাবকদের অনুমতি নিতে হবে না। তাঁরা আলাদা লাইসেন্স পাবেন। সৌদিতে মেয়েদের স্কুল আছে, বিশ্ববিদ্যালয় আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়েদের শারীরিক শিক্ষা চালু হচ্ছে। এখন সৌদি নারীরা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করতে পারছেন। সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নিতে পারেন, নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছে, নারীরা মন্ত্রী হিসেবেও নিয়োগ পাচ্ছেন, মজলিশে শুরায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন নারীরা।

সৌদি নাগরিকদের বিভিন্ন দেশ সফরে ব্যয় করা অর্থ দেশেই ধরে রাখতে চান তিনি। পর্যটনশিল্প বিকাশে রিয়াদের কাছে ‘লাস ভেগাসের’ আদলে বিনোদন নগরী গড়া হচ্ছে। তথ্যসূত্র: এএফপি ও আইএএনএস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *