সিরাজগঞ্জের শীতল পাটি, সুনাম যার দেশ জুড়ে

Slider খুলনা

105932সিরাজগঞ্জ জেলায় তৈরী হচ্ছে দেশের উন্নতমানের শীতল পাটি। তাই এ শীতল পাটির সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জের সদর, রায়গঞ্জ ও কামারখন্দ উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর, হরিপুর, ঝাঐল ও আটঘরিয়া গ্রামে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের উন্নতমানের শীতল পাটি।

এখানকার শীতল পাটির ঐতিহ্য প্রায় পাঁচশ’ বছরের। বংশপরস্পরায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত। এ শিল্পকে তারা জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অবলম্বন করে আসছে।

শীতল পাটির মূল কাঁচামাল মূর্তা বেত গাছ। বাড়ির আশপাশে ও সব ধরনের জমিতেই মূর্তা বেতগাছ চাষ হয়। চারা রোপণের পর দুই-তিন বছরেই মূর্তা বেতগাছগুলো পাটি তৈরীতে ব্যবহার করা যায়। মূর্তা বেত গাছ কাটা, বেতি তোলা ও নানা ধরনের রঙের কাজ পুরুষেরাই করে থাকে। আর নিপুণ হাতে বাহারি ধরনের পাটি তৈরীর কাজ করে বাড়ির নারীরা।

গ্রামগুলোতে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বধুরা মেহেদী হাতে নিপুণভাবে বুনন করছে শীতল পাটি। বসে নেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তবে ঊর্ধ্বমুখি শ্রমবাজারে মজুরি কম, পুঁজি সংকট, কাঁচামালের অভাব ও বাজারজাতকরণসহ নানা সমস্যা থাকলেও নারীদের দৃঢ় মনোবল এ শিল্পটিকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে।

আটঘরিয়া গ্রামের কাঞ্চনা রানী ও বীনা রানী জানান, বউ হয়ে যেদিন ঘরে এসেছি, তার পরেরদিন থেকেই শীতলপাটি বুননের কাজ শুরু করেছি। শীতল পার্টি তৈরী করাই আমাদের মূল পেশা। এটিই আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।

হরিপুর গ্রামের কারিগর রামু ও লক্ষণ চন্দ্র জানান, শীতল পার্টি পূর্ব-পুরুষদের ঐতিহ্য। প্রায় পাঁচশ’ বছর ধরে এ গ্রামে শীতল পার্টি তৈরী করা হচ্ছে। আগে এগুলো কলিকাতাসহ বিভিন্ন দেশে চলে যেত। পুঁজি সংকটের কারণে এখন এ শিল্পের করুণ অবস্থা দেখা দিয়েছে।

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন জানান, এখানকার শীতল পাটির সুনাম সারাদেশে। তাই শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ বর্তমানে চালু নেই। তবে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, উৎপাদিত শীতল পার্টি যাতে সহজভাবে বাজারজাত করা যায় সে জন্য নির্দিষ্ট হাটের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও এদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *