মেলার মানুষের চক্ষুস্থির! একি মাছ না জলদানো! পাক্কা ১০০ কেজি ওজন। পটাপট ছবি তোলার হিড়িক। এই রাজকীয় বাঘাইড়ের টুকরো পাতে না পড়ুক, ছবি তুলে রাখলেও মেলা দেখা সার্থক! বগুড়া পোড়াদহের মেলায় এভাবেই দর্শকদের মাত করেছে সেই বিশালদেহী বাঘাইড় মাছ। বিক্রেতা দাম হাঁকছেন ১ লাখা ২০ হাজার টাকা।
আঁকাবাঁকা বহমান ইছামতী নদী। পাশেই মহিষবান গ্রাম। ভোর থেকে নদীর তীরজুড়ে মানুষের ঢল। আজ বুধবার সেখানেই বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা। মেলার মূল আকর্ষণ ওই মৎস্যরাজ।
শুধু এই বাঘাইড়ই নয়, আরও দুটি বিশাল বাঘাইড় নিয়ে এসেছেন শখের মাছ বিক্রেতা গাবতলী উপজেলার চকমরিয়া গ্রামের লাল মিয়া । পেশায় তিনি শহরে ডাব বিক্রেতা। তিনি বলেন, লাভের আশায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকা থেকে তিনটি মাছ কিনে এনেছেন। অন্য দুটির ওজন ৮৫ ও ৪০ কেজি করে। কেউ একা না কিনলে কেটে কেটে মাছটি বিক্রি করবেন তিনি। প্রতি কেজি মাছের দাম হাঁকছেন ১ হাজার ২০০ টাকা ।
গোলাবাড়ির মরিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রেজাউল বারী জানান, মাঘ মাসের শেষ দিকে বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার পোড়াদহের মেলা বসে। মেলার প্রধান আকর্ষণ শত কেজি ওজনের বাঘাইড়। এ ছাড়া এসেছে চিতল, বোয়াল, আইড়, বাউশ, রুই, মৃগেল, কাতলসহ নদীর অনেক মাছ।
মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ। এর মধ্যে শত কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের সঙ্গে কেউবা সেলফি তুলছেন, কেউবা স্মৃতি ধরে রাখতে এমনি ছবি তুলে রাখছেন।
মেলায় মাছের ১৫-২০টি দোকানে তিন–চার শ বাঘাইড় উঠেছে। সর্বনিম্ন ৩ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১০০ কেজি এসব মাছের ওজন। তিন কেজি মাছের কেজি ৪০০ টাকা করে হাঁকা হচ্ছে।
মেলা উপলক্ষে মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন খুলনার কেসিসি উইমেন্স কলেজেরে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে পড়া তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সামরুজ সুলতানা । তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এই মেলায় আসব আসব করেও সময় মিলছিল না । এবার সময় পেয়ে প্রথমবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় এসেছি । বিশাল বড় বড় মাছ দেখেছি। এত বড় বড় মাছ আমাদের দেশে আছে, আগে জানা ছিল না।’ বর্তমান প্রজন্মের মাছ চেনার জন্য এই মেলায় আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
মেলায় মেয়ের জামাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আফরোজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমি এই দেশের মেয়ে। প্রতিবছর মেলায় সময়ে এখানে আসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সময় হয় না। তবু এবার মেলায় এসে বিশাল বড় বড় বাঘাইড় মাছ দেখেছি।’