কোহলিকে ওপেন চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানি কোচের

Slider খেলা

293519_175

 

 

 

 

 

 

 

 

ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন পাকিস্তান দলের কোচ মিকি আর্থার। পাকিস্তানে গিয়ে ভারত অধিনায়কের পক্ষে সেঞ্চুরি করা কঠিন হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। কোহলিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সাবেক প্রোটিয়া তারকা মিকি আর্থার বলেন, ‘সব দলের বিরুদ্ধে কোহলিকে শতরান করতে দেখে ভালো লাগে। তবে আমার ধারণা, পাকিস্তানের মাটিতে সেঞ্চুরি করতে পারবে না কোহলি। নিজের দেশে আমাদের বোলাররা ওকে সহজে রান করতে দেবে না।’

সব ধরণের ক্রিকেটেই অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন বিরাট কোহলি। টেস্ট ক্রিকেটে স্টিভ স্মিথের সঙ্গে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ওয়ান ডে এবং টি-২০ ক্রিকেটে ভারত অধিনায়কের ধারেকাছে এই মুহূর্তে কেউ নেই। টেস্ট খেলা দলগুলির মধ্যে ৯টি দেশের মাটিতেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে হারলেও শতরানের স্বাদ পেয়েছেন কোহলি। নিজের দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটসম্যানের সেই ধ্রুপদী সেঞ্চুরি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন পাকিস্তান দলের কোচ মিকি আর্থার। তিনি বলেন, ‘কোহলি নিঃসন্দেহে দারুণ এক ক্রিকেটার। ও যখন বিভিন্ন দলের বিরুদ্ধে ধারাবহিক ভাবে রান করে, তখন খুবই ভালো লাগে। কারণ ওর ব্যাটিং আমি বেশ উপভোগ করি।’

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাকিস্তানের মাটিতে এখনো টেস্ট খেলা হয়নি কোহলির। ২০০৭-০৮ মরশুম থেকে এখন পর্যন্ত কোনো টেস্ট সিরিজ খেলেনি ভারত ও পাকিস্তান। মাঝে ২০১২-১৩ মরশুমে একটি ওয়ান ডে সিরিজ খেলতে ভারতে এসেছিল পাকিস্তান। সেটাই শেষ। আর্থার বলেন, ‘পাকিস্তানে ব্যাট করা সব ব্যাটসম্যানদের কাছেই কঠিন চ্যালেঞ্জের। আশা করি, পাকিস্তানের মাটিতে অদূর ভবিষ্যতে খেলতে আসবে ভারতীয় দল। টেস্ট না হোক, অন্তত সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলতে দেখা যাবে ভারতকে। সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক কথাই শোনা গেছে। বাস্তবে তা সত্যি হয়নি। তবুও আশা করব এই জটিলতা একদিন কাটবে। টেস্ট খেলা সব দেশের বিরুদ্ধে কোহলিকে সেঞ্চুরি করতে হলে ভারতকে অবশ্যই পাকিস্তানে আসতে হবে।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতীয় টেস্ট দলের সদস্যদের মধ্যে দীনেশ কার্তিক এবং পার্থিব প্যাটেল ছাড়া কেউই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেননি।

তবে পাকিস্তানের মাটিতে না খেললেও, প্রতিবেশি এই দেশের বিরুদ্ধে দু’টি শতরান রয়েছে কোহলির। ওয়ান ডে ক্রিকেটে কোহলির সর্বোচ্চ রান ১৮৩। ওই ইনিংসটিও কোহলি খেলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০১২ এশিয়া কাপে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোট ১২টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন বিরাট। দু’টি শতরান এবং একটি অর্ধশতরানসহ ৪৫৯ করেছেন তিনি। গড় ৪৫.৯০। এছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬টি টি-২০ ম্যাচে দু’টি অর্ধশতরান সহ ৮৪.৬৬ গড়ে বিরাট ২৫৪ রান করেছেন ভারত অধিনায়ক।

‘জিনিয়াস কোহলি’ই এখন বিশ্বসেরা : মিয়াঁদাদ

‘গ্রেট শব্দটা এখন যেখানে সেখানে ব্যবহৃত হয়। তাই বিরাট কোহলি সম্পর্কে নতুন কিছু বলা প্রয়োজন’। বক্তার নাম জাভেদ মিয়াঁদাদ। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ক্যাপ্টেন কোহলির দুরন্ত শতরানে মজেছেন পাকিস্তানের সাবেক তারকা ব্যাটসম্যানটি। এক সাক্ষাৎকারে মিয়াঁদাদ জানিয়েছেন, ‘বিরাটকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। ওর অসম্ভব ধারাবাহিকতাকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই। ম্যাচের পর ম্যাচ প্রত্যাশার পাহাড় কাঁধে নিয়ে ও ক্রিজে আসে। ব্যর্থ হলেই সমালোচনার জন্য তৈরি অনেকে, এটা মাথায় নিয়েই বিপক্ষ বোলারদের মোকাবিলা করতে হয় ওকে। তা সত্ত্বেও এই পারফরম্যান্স বিরাটকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ওর ব্যাটিং দেখলে জিনিয়াস শব্দটাই প্রথমে মনে আসে। কোনও সন্দেহ নেই, এই মুহূর্তে বিরাটই বিশ্বের সর্বোত্তম ব্যাটসম্যান।’

কেন বিরাট কোহলিকে বাকিদের থেকে এগিয়ে রাখছেন? মিয়াঁদাদের বিশ্লেষণ, ‘নিজে একটু-আধটু ক্রিকেট খেলেছি। তাই জানি, মনঃসংযোগে বিন্দুমাত্র চিড় ধরলেই প্রতিপক্ষের বোলাররা আপনাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠাবে। বিরাটকে এগিয়ে রাখব দু’টি জায়গায়। প্রথমত ওর মনঃসংযোগ। অনেক বড় ব্যাটসম্যানের শুরুটা নড়বড়ে হয়। কেউ কেউ আবার মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে। বিরাট অন্য ধাতুতে গড়া। ক্রিজে নেমে প্রথম বলই যদি ও হাফভলি পায় তাহলে ফিল্ডারকে বল বাউন্ডারির ওপার থেকে আনার জন্য তৈরি থাকতে হবে। প্রতিপক্ষ বোলার নয়, বিরাট খেলে প্রতিটি বলের গুরুত্ব বুঝে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, বোলারদের লাইন ও লেংথ বিরাটের থেকে দ্রুত পড়ে ফেলতে কেউ পারে না। এর আগে শচীন তেন্ডুলকর ও ব্রায়ান লারার মধ্যেও এই গুণ ছিল। টেকনিক্যালি সাউন্ড না হলে এই জায়গায় পৌঁছানো যেত না। বিশ্ব ক্রিকেটে অনেকেই আছে, টেকনিকে গলদ নিয়েও বেশ কিছু রান করে ফেলেছেন। কিন্তু কঠিন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ তারা। বিরাট এই জায়গাতেই অনেক মাইল এগিয়ে। তিন ধরনের ফরম্যাটে এতটা সফল হওয়ার জন্য রানের প্রচণ্ড খিদে থাকা আবশ্যক। ভারতের ক্যাপ্টেনের তা রয়েছে।’

৩৫৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৬২১৩ রানের মালিক মিয়াঁদাদ। টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে তাঁর শতরানের সংখ্যা যথাক্রমে ২৩ ও ৮। বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত সেই জায়গায় টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে যথাক্রমে ২১ ও ৩৪টি শতরানের মালিক। এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন পাক অধিনায়কের বক্তব্য, ‘সেঞ্চুরি ইজ সেঞ্চুরি। সে যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটেই হোক না কেন। বিরাট যেভাবে এগচ্ছে তাতে শচীনকে পিছনে ফেলা ওর পক্ষে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। পেস ও স্পিন, দু’ধরনের বোলিংকেই ও নিজের মতো করে খেলতে পারে। পারে সহজেই ধ্বংস করতে। বিপক্ষ বোলারদের দুর্বলতা দ্রুত বুঝে নিতে না পারলে যা সম্ভব নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *