সম্পাদকীয়: ৫৭ ও ৩২, মত প্রকাশে বেড়িবাঁধও বটে!

Slider টপ নিউজ সম্পাদকীয় সারাদেশ

images

সাইবার অপরাধ দমনে নতুন আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ আর তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ পাঁচটি ধারা বাতিল করা হয়েছে৷ তবে ডিজিটাল আইনও এবার সমালোচনার মুখে৷ এই আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আরো সংকুচিত করবে৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ – শিরোনামের সাইবার অপরাধ দমন আইনটিতে মোট ৪৮টি ধারা আছে৷ এর মধ্যে ১৭ থেকে ৪৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার ফলে, সংসদে এই আইন পাসে আর কোনো বাধা থাকলো না৷ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ আরো কিছু ধারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ায়, ঐ আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বাতিলে করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷

নতুন আইনের ১ থেকে ১৬ ধারায় ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব, এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে৷

ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে সেই ব্যক্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷

২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাতকরে, তাহলে তার ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা হবে৷

২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে সেই ব্যক্তির তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে৷

৫৭ ধারার অপরাধ: ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মিথ্যা, অশ্লীল বা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ-সংক্রান্ত অপরাধ এই ধারায় গণ্য হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা ও অশ্লীল কিছু প্রকাশ করলে এবং তার কারণে মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে বা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।আর যে এই আইন লঙ্ঘন করবে তাকে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে।

‘অনুভূতিতে আঘাতের ব্যাখ্যা কী?’

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাই ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, এ আইনে কোথাও কোনো ধারায় সাংবাদিকদের ‘টার্গেট’ করা হয়নি৷”

বেআইনিভাবে কারুর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে৷ এছাড়া বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি কেউ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে৷

কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করেন, তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে৷ কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করেন, তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয় দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করেন, তাহলে তিনি ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷

২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখান, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে

৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কেউ যদি কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করেন, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে৷

৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে তাকে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে৷

এই আইনের ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার সব অপরাধ জামিন অযোগ্য৷ তবে ২০, ২৫, ২৯ এবং ৪৮ ধারার সব অপরাধ জামিনযোগ্য৷

ডিজিটাল আইনের খসড়া তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যা প্রস্তাব করেছি, তা রাখা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে নতুন ডিজিটাল আইনে বিতর্কিত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নতুন আইনের ১৮ এবং ১৯ ধারায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ৩২ ধরায় যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র এবং স্বাধীনতা আরো সংকুচিত হবে৷”

৫৭ ধারার মামলাগুলো চলবে

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ পাঁচটি ধারা বাতিল হলেও এ ধারায় যে মামলাগুলো চলমান, সেগুলো চলবে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে৷ তবে যেহেতু ধারাটি থাকবে না বিচারকের রায়ই এখানে চূড়ান্ত৷”

সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সারাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে ৭৪০টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা করা হয় ৫৭ ধারায়৷

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *