রাখাইনে বৌদ্ধদের পুনর্বাসন করতে মসজিদ মাদরাসাও ধ্বংস করা হচ্ছে

Slider চট্টগ্রাম

289188_165

 

 

 

 

রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা-নির্যাতনের মুখে দেশছাড়া করার পর এখন রাজ্যের মসজিদ ও মাদরাসাগুলো ধ্বংস করে সেখানে রাখাইনসহ অন্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পুনর্বাসন করছে মিয়ানমার সরকার। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর শূন্য ভিটামাটিতে রাখাইনদের জন্য বাড়ি বানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ও রাখাইনের বিভিন্ন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

রাখাইনের মুসলিম প্রধান তিনটি টাউনশিপ (জেলা) রাচিডং, বুচিডং ও মংডু জেলায় বৌদ্ধদের জন্য এসব ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে প্রশাসন। পুনর্বাসিত বৌদ্ধদের চিকিৎসার জন্য সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। পুনর্বাসন কাজ নিশ্চিত করার জন্য এসব জেলায় বিপুল সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এসব টাউনশিপের মোট জনসংখ্যার ৬০ ভাগ রোহিঙ্গা মুসলিম ও ৪০ ভাগ বৌদ্ধ রাখাইন ছিল। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী এখন বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার রাখাইন ও অন্য বৌদ্ধদের এনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করছে।

প্রথমে মিয়ানমারের সীমান্ত জেলা ও রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মংডু জেলার হরইতলী এলাকায় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি এবং মসজিদ মাদরাসাগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপর তারা বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে। এভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোকে ফাঁকা মাঠে পরিণত করার পর সেখানে এখন রাখাইন বৌদ্ধদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সূত্র জানিয়েছে, চৌহদ্দিরবিল এলাকার মসজিদের দীর্ঘ দিনের পুরনো পুকুরটিও নিশ্চিহ্ন করছে সেনারা। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ ট্রাকে করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে। এলাকার বড় বড় গাছগাছালি কেটে মিয়ানমার প্রশাসন তাদের দখলে নিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর তাদের যেন ক্যাম্পে বন্দী রাখার আয়োজন করছে। একই সাথে রাখাইনের তুমব্রুসহ বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আবারো সেনা অভিযান জোরদার করেছে মিয়ানমার সরকার।
প্রতিদিন রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে অবশিষ্ট ঘরবাড়ি ধ্বংস, তাদের মারধর ও আটক করছে সৈন্যরা। নো-ম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া বেশ ক’জন রোহিঙ্গাকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে গেছে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।
রাখাইনে এমন অব্যাহত সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রত্যাবাসন আতঙ্কে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের কথিত সংঘর্ষের পর থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। অভিযানকালে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয সহযোগীরা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, গণহত্যা ও নির্যাতন করা হয়। এ হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *