রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী জানান, প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করবে। গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্রিফ করার পর তিনি এ কথা জানান। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রত্যাবাসন চুক্তি নিয়ে ঢাকায় কর্মরত ৫২ দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, একটি নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করবে বাংলাদেশ। চুক্তির একটি খসড়া এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। খুব শিগরিই চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন দেশের সমর্থন অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান। তবে রোহিঙ্গারা ঠিক কবে থেকে মিয়ানমারে যেতে শুরু করবে, সে তারিখ সম্পর্কে এ মুহূর্তে কিছুই বলার নেই। দেখা যাক কবে থেকে শুরু করা যায়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে মঙ্গলবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারে। দুই পর্বের কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে ছিল ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি, তুরস্ক, রাশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং জাতিসংঘ, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ফাও), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেডক্রসের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া মিসর, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মরক্কো, ওমান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সরা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের আর মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ও সর্বশেষ ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি হয়েছে, সেটি জানিয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমার একটি ফরম দিয়েছে। আমরা তা পূরণ করে পাঠাব। মিয়ানমার যাচাই-বাচাই করে সেটি আমাদের দেবে। আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করব। এ জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করব। মিয়ানমার নীতিগতভাবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে সম্পৃক্ত করতে রাজি। তবে তা প্রয়োজন পড়লে। তারা রেডক্রসকে সম্পৃক্ত করতে রাজি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন। কাউকে জোর করে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। যে তিনটি চুক্তি হয়েছে, তার প্রতিটিতেই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়েছে। যখন দেখা যাবে রাখাইনে পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে, নিরাপত্তা ও জীবিকার বিষয়ে শঙ্কা নেই, তখন রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে আপত্তি করবে না। এর আগে পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাখাইন পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছিল মিয়ানমার। এখন আবার সে ধরনের সফরের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। যদি প্রয়োজন হয়, নিজেও রাখাইন সফরে যাবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।