ট্রাম্প-উনের তর্জন-গর্জনে কতটা সার?

Slider সারাবিশ্ব

633493e9b03a4c2ee91160c919534e7e-5a4e04cd96b03

 

 

 

 

প্রথমে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন দাবি করলেন, পারমাণবিক বোমা ছোড়ার বোতাম তাঁরটা বড়। এ কথা শুনে বসে থাকেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, পারমাণবিক বোমা ছোড়ার বোতাম তাঁরটা বেশি বড়। দুই নেতার কথায় যত গর্জন, বাস্তব অবস্থা কি আসলে তেমন?

নিজেরটা সেরা, এমন কথা ট্রাম্প অবশ্য এবারই প্রথম বলেননি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছিলেন, তাঁর হাত বড়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বড়। এ নিয়ে বিস্তর হাসাহাসি হয়েছে। এবার যখন পারমাণবিক বোমার বোতাম নিয়ে বললেন, তখনো হাসাহাসি হচ্ছে। কেউ কেউ অবশ্য বিপদের আশঙ্কা করছেন, চলছে এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ। আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে—কে বেশি খ্যাপাটে? ট্রাম্প না উন?

পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই নেতার দাবি অনুযায়ী আসলে কোনোটাই তেমন বড় নয়। পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ইউএসএ টুডে ৩ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদনে বলেছে, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বলা যত সহজ, কার্যকর করা ততটা সহজ নয়।

ইউএসএ টুডে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছে, পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার তেমন কোনো বোতাম নেই। এ ছাড়া কিম জং উনের কাছেও প্রাণঘাতী এ অস্ত্রের ব্যবহারের জন্য কোনো বোতাম আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অবশ্য দ্রুততার সঙ্গে বোতাম টেপার মতোই পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার নির্দেশ দিতে পারেন। ব্রুস ব্লেয়ার নামের একজন গবেষক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৫ মিনিট সময়ের মধ্যে ৮০০ পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার ক্ষমতা রাখে। তবে প্রক্রিয়াটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে কোনো ভুল না হয়, যাতে সহজেই একক সিদ্ধান্তে মানববিধ্বংসী এ অস্ত্র না ছোড়া হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং–উনের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বাক্যবিনিময় মার্কিনদের ষাটের দশকের হলিউড সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৬২ সালের এমন একটি সিনেমায় মার্কিন এক খ্যাপাটে এয়ারফোর্স জেনারেল সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলার নির্দেশ দেন। ইউএসএ টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি সিনেমার এ কাহিনির মতো নয়। মার্কিন সামরিক বিভাগের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, সামরিক বিভাগ পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতা বিবেচনা করেই এ অস্ত্র ছোড়া নিয়ে নিয়মিত মহড়া দিয়ে থাকে।

মার্কিন এয়ারফোর্স জেনারেল জন হাইটেন বলেছেন, তাঁদের কাজ হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে উপদেশ দেওয়া। সামরিক বিভাগ থেকে বেশ কিছু বিকল্প হামলা এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রেসিডেন্টকে উপদেশ দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে পরমাণু হামলার পর হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ের চরম নিরাপত্তাবেষ্টিত বাংকারে প্রেসিডেন্ট তাঁর এ–সংক্রান্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে মিটিং করবেন। প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনে না থাকলে কনফারেন্স কলের মাধ্যমে এ মিটিংয়ে যোগ দেবেন। এয়ারফোর্স জেনারেলের মতে, এ সভায় ১৫ জনের মতো উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা থাকার সুযোগ রয়েছে।

নিউক্লিয়ার ফুটবল নামের একটি থলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সব সময় তাঁর সহকারীরা বহন করে থাকেন। গবেষক ব্লেয়ারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ থলের মধ্যে কোনো বোতাম নেই, যা অন্য কিছুর সঙ্গে সংযোগ করা আছে। নিউক্লিয়ার ফুটবলে পরমাণু হামলার নানা বিকল্প নিয়ে কিছু দলিল ও নির্দেশনা রাখা হয়েছে। নিউক্লিয়ার ফুটবল নামের যে থলে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সঙ্গে রাখা হয়, সেখানে পরমাণু হামলার নির্দেশনা যাচাইয়ের জন্য কিছু কোড সংরক্ষিত আছে। এসব কোড আবার কোনো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্ডে লিখে নিজেদের পকেটে রাখেন। এ ধরনের কোড লেখা কার্ডকে বিস্কুট বলা হয়। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তাঁর মেয়াদে এমনই একটি বিস্কুট হারিয়ে ফেলেছিলেন, যা সে সময় পত্রিকার সংবাদে এসেছিল।

পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার জন্য প্রেসিডেন্টের নির্দেশ এলে তা দ্রুত পেন্টাগনের কমান্ড সেন্টারে পৌঁছানোর কথা। পেন্টাগন থেকে আবার কোড ব্যবহার করে যাচাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। মিসাইল বা পরমাণু অস্ত্রবাহী অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক যুদ্ধের নির্দেশনা থেকে দ্রুত কার্যকর। ব্রুস ব্লেয়ারের মতে, প্রেসিডেন্টকে দায় থেকে রক্ষার জন্য পরমাণু হামলার প্রটোকল সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং কঠোর নিয়মে ঘেরা।

পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারে উত্তর কোরিয়ার প্রটোকল নিয়ে বাইরের তেমন জ্ঞান নেই। যদিও মার্কিন সমর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরমাণু অস্ত্রের নতুন মজুতদার উত্তর কোরিয়া। দেশটির সবকিছুই চলে কিম জং–উনের ইচ্ছায়।

ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশ্লেষক মাইকেল এলেম্যান মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার বেলায় শাসক কিম জং–উনের ব্যক্তিগত বিশ্বস্ততার চেইন ধরেই হয়তো হামলার নির্দেশনা আসবে। পারমাণবিক অস্ত্রের নতুন মজুতদার হিসেবে মানসম্পন্ন কোনো নিয়ম বা প্রটোকল উত্তর কোরিয়ায় গড়ে ওঠেনি বলেই মার্কিন সমর বিশ্লেষকদের ধারণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *