টঙ্গীর সব ড্রেনই যেন ডাস্টবিন!

Slider ঢাকা

IMG_0296

 

 

 

 

 

টঙ্গীর চেরাগআলী সিরামিক মার্কেট মসজিদ গলিতে কোনো ডাস্টবিন নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন প্রতিদিন বাড়িঘরের সব ময়লা-আবর্জনা মসজিদ গলির ড্রেনে ফেলে।

ড্রেনটি বর্তমানে আবর্জনায় ভরে গেছে। এমন চিত্র পুরো টঙ্গীতে। কোথাও কোনো ডাস্টবিন না থাকায় ড্রেনে সবাই ময়লা ফেলে। ১৯৭৪ সালে টঙ্গী পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন এলাকায় ডাস্টবিন তৈরি করা হলেও ধীরে ধীরে এসব বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এ এলাকায় কোনো ডাস্টবিন নেই।

গাজীপুর সিটি কপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টন বর্জ্য জমা হয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এসবের বেশির ভাগই ড্রেন অথবা যত্রতত্র পড়ে থাকে। বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের যে কয়টি গাড়ি রয়েছে, তা শুধু বড় রাস্তার পাশের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে। কিন্তু এসব গাড়ি স্থানীয় আবাসিক এলাকার অলিগলিতে ঢোকে না।

এ অবস্থায় লোকজন বাধ্য হয়ে ড্রেনে অথবা রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলে। বর্ষা মৌসুমে ময়লা জমে অধিকাংশ ড্রেন উপচে পানি রাস্তা ও বাড়িঘরে ঢোকে। বছরজুড়ে এসব আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।
শিল্পাঞ্চল ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অধিকাংশ ড্রেনের ওপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে ড্রেন পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ড্রেনগুলো থেকে নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ না করায় তাতে পানি সরতে সমস্যা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সমপ্রতি কিছু সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠন ময়লা অপসারণে ভ্যান সার্ভিস চালু করেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এ ভ্যান সার্ভিসের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো নিয়মনীতি না থাকায় তারা নিজেদের ইচ্ছামাফিক চার্জ আদায় করে। এ নিয়ে কেউ আপত্তি জানালে তাঁর বাড়ি থেকে ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের আবর্জনা অপসারণের গাড়িগুলো এ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিচ্ছে। গাড়ির চালক ও কর্মচারীরা সাধারণত হোটেল-রেন্টুরেন্ট ও বাজারের ময়লা নিতেই বেশি আগ্রহী। অথচ বিভিন্ন এলাকায় পড়ে থাকা আবর্জনা নিতে তাদের অনীহা। টঙ্গীতে আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং প্লেস না থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে হোসেন মার্কেট ও টেলিফোন শিল্প করপোরেশনের সামনে আবর্জনা ফেলা হয়। এতে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

দত্তপাড়া প্রাইমারি স্কুল রোডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সিটি করপোরেশনকে জানালেও তারা ভ্রুক্ষেপ করে না।

আরিচপুর এলাকার বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের কোনো সুপারভাইজারকে এলাকার ময়লা-আবর্জনার খোঁজ নিতে দেখা যায়নি। শুনেছি, এ ব্যাপারে নাকি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছেন। ’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নতুন নিয়ম অনুযায়ী ড্রেনের ময়লা অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ফোন করে জানাতে হয়। কিন্তু ফোনে কাউন্সিলরদের পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম নূরু বলেন, তাঁর এলাকায় একটি বড় ডাস্টবিন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটা চালু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

৫৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলেক বলেন, ‘এলাকার ময়লা-আবর্জনা অপসারণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি লোক পাঠিয়ে দিই। মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন জেলে ছিলাম। এ কারণে যথাযথ সেবাদানের সুযোগ পাইনি। ’

বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘অভিযান’-র পরিচালক আরাফাত চৌধুরী লিটু বলেন, ‘আমরা অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন বাড়ির ময়লা অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি। ময়লাগুলো আপাতত হোসেন মার্কেটে রাস্তার পাশে ফেলা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের ট্রাক সেই ময়লা নিয়ে যায়। ’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আয়তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পর্যাপ্ত জনবল ও যানবাহন পাইনি। এ ছাড়া নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং প্লেস না থাকায় বর্জ্য অপসারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *