যুবলীগ, যুবদল মিলেমিশে চর দখল

Slider বিচিত্র

a0a2b030452272e529ba9c9dda8fd3be-5a3b27ea5c463

 

 

 

 

রাজশাহী শহরের কাছাকাছি এবার পদ্মা নদীতে বিশাল চর জেগেছে। ইতিমধ্যে যুবলীগ, যুবদল, এমনকি মাদক ব্যবসায়ীরাও এই চরের দখল নিয়েছেন। কেউ নিজেরা চাষ করছেন, আবার কেউ দখল নিয়ে অন্যদের দিয়ে চাষ করাচ্ছেন। আবার কেউ দখল করা জমিতে বিনোদনকেন্দ্র তৈরি করছেন।

দখলদারদের অনেকেই বলছেন, তাঁরা শাহ্ মখদুম রূপোষের (রহ.) দরগার জমি চাষ করছেন। কেউ বলছেন, বিজিবির কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চাষ করছেন। তবে উপজেলা ভূমি কার্যালয় বলছে, এ জমির মালিক জেলা প্রশাসক। অনুমতি ছাড়া কেউ জমি দখল করতে পারবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন চরের এই এলাকাটি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাপাশিয়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কাদিপুর, চররামপুর ও চরবিন্দাদহ মৌজার মধ্যে পড়েছে। এর পুরোটাই খাসজমি। এর মালিক জেলা প্রশাসক। চরটি স্থায়ী হলে জেলা প্রশাসন সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।

গতকাল বুধবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাওয়ার টিলারে চাষ চলছে। চারদিকে চর দখলের হিড়িক পড়ে গেছে। এই দখলদারের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা, সৈনিক লীগ নেতা, যুবদল নেতা, ক্রীড়াবিদ, মাদক ব্যবসায়ীসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। স্থানীয় ভূমি কার্যালয় এ রকম ৫৩ জন দখলদারের পরিচয় পেয়েছে।

গতকাল ভূমি কার্যালয়ের লোকজন গিয়ে বিনোদনকেন্দ্রটি উচ্ছেদ করেন। তিনটি পাওয়ার টিলার মাঠ থেকে তুলে দেন। মাঠে যাঁদের পেয়েছেন, তাঁদের সতর্ক করে দিয়েছেন। পবা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার আবদুল্লাহ আল মাসুম জানান, মাঠে যাঁদের পেয়েছেন, তাঁদের তুলে দিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, রাজশাহী মহানগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাগর শেখ এই চরের ১০০ বিঘা জমি চাষ করছেন। তাঁর ভাই রুবেল শেখ একইভাবে চরের জমি চাষ করছেন। রুবেল শেখ একই ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি। দুই ভাই দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকলেও একই সঙ্গে চরের জমি দখল করে চাষ করছেন। এ ব্যাপারে সাগর শেখের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বিজিবি পার্কের নিচে তিনি দুটি প্লটে ১০০ বিঘা জমি চাষ করছেন। বিজিবির কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে তাঁরা এই জমি চাষ করছেন।

তবে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে এসি ল্যান্ডের দায়িত্বেও রয়েছেন) আলমগীর কবির বলেন, খাসজমির মালিক জেলা প্রশাসক। তিনি ছাড়া এই জমি কেউ ইজারা দিতে পারবে না। বিজিবি পার্ক যেখানে করেছে, সেই জমিটুকু তাদের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গতকাল চরে গিয়ে দেখা যায়, চর শ্যামপুর এলাকার আসমত আলী বেশ কিছু শ্রমিক নিয়ে ধান রোপণ করছেন। তিনি দাবি করেছেন, জিল্লু সরদারের কাছ থেকে তিনি ১০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে চাষ করছেন। জিল্লুর সরদার এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর নামে একাধিক মামলা রয়েছে।

মাঠে গিয়ে শাহীন নামের একজনের মুঠোফোন নম্বর জানা যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে রাজশাহী মহানগর সৈনিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি তো জমি চাষ করছেন না। এলাকার বড় ভাইয়েরা সবাই করছেন। তাঁরা এমনি যান। বড় ভাইদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পদ্মা গার্ডেনের লিটন ভাই (শামীম রেজা), এলাকার বাদশা ভাই, শান্ত, বাচ্চু, বিএনপির সুইট—অনেকে মিলেই করছেন। কেউ একা করছেন না।

যোগাযোগ করা হলে পদ্মা গার্ডেন ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক শামীম রেজা ওরফে লিটন দাবি করেন, তাঁরা দরগার জমি চাষ করেন। তিনি একা নন, দরগাপাড়ার সবাই মিলেমিশে করেন। এখানে দরগার ৩০৬ একর জমি রয়েছে। তাঁরা ফসল তুলে দরগা কর্তৃপক্ষকে দানস্বরূপ কিছু দিয়ে থাকেন। জেলা প্রশাসক দরগাকে কাগজ করে দিয়েছেন।

তবে শাহ্ মখদুম রূপোষের (রহ.) দরগা শরিফের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘সরকার’ শরীফুল ইসলাম বলেন, দরগার জমি একসময় ছিল। সেটা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন চর জেগে ওঠার পর সরকার থেকে দরগার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এ জন্য যাঁরা চাষ করছেন, তাঁদের কাছ থেকেও তাঁরা কিছু চাইতে পারেন না। কারণ, চাইতে গেলেই কাগজপত্র লাগবে। সেই কাগজপত্র দরগার হাতে নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *