কিছু বিধান অগ্রহণযোগ্য, অবশ্যই সংশোধন করতে হবে

Slider বিচিত্র

44544671c874720adf142baad54d2248-5a33301e9e957

 

 

 

 

এটা ইতিবাচক যে অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য শৃঙ্খলা বিধিমালা জারি করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সঙ্গে সরকারের তীব্র দ্বন্দ্বের একটা অবসান ঘটতে যাচ্ছে। কোনো দেশেই রাষ্ট্রের এক অঙ্গের সঙ্গে অন্য অঙ্গের দীর্ঘ টানাপোড়েন কাম্য নয়। আগামী ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন ধার্য করেছেন।

বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধানের সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তাই সব অবস্থায় বিচারকদের ওপর সুপ্রিম কোর্টের চিরাচরিত কতগুলো অধিকার আছে ও থাকবে। এগুলো কোনো দর-কষাকষির বিষয় নয়। কোনো বিধি বা সংসদের কোনো আইন দ্বারা তা রহিত করা যাবে না। বিধিতে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার খর্ব এবং শুধু ‘সময়সীমা’ রক্ষার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতের প্রাধান্য উল্লেখ করার মতো কিছু উদ্বেগজনক বিধান আছে, যা সংশোধনযোগ্য। মাসদার হোসেন মামলার রায়ে বলা হয়েছে, ‘জনপ্রশাসনের সঙ্গে বিচারকদের তুলনা করা যাবে না। কারণ, তেলে-জলে মিশবে না।’ অথচ সংবিধানের সরকারি কর্মভাগের ১৩৩ অনুচ্ছেদ, অর্থাৎ বিচারকদের সরকারি কর্মচারী গণ্যে নতুন বিধি করা হয়েছে। মাসদার মামলার মুখ্য আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম ও এর বাদী মাসদার হোসেন বুধবার বলেন, ‘ওই বিধি তাই সংবিধান এবং মাসদার রায়ের পরিপন্থী। এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে সহমত আছে আমাদের।’

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের চিন্তাচেতনায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কম জোরালো নয়। তারা সুদূর অতীত থেকে কখনো অধস্তন আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগ্রহ দেখায়নি। এক-এগারোতে অগ্রগতি যা ঘটেছে, সেটা যে আওয়ামী লীগ সংসদে পাস করেছিল, সে জন্য সাধুবাদ তাদের প্রাপ্য। সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া লোক দেখানো কারণ মাসদার হোসেন মামলার রায় বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, ক্ষমতায় থাকতে তারা বরং এর বিরোধিতাই করে গেছে।

এটা পরিহাসমূলক যে বাহাত্তরের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে শৃঙ্খলাসংক্রান্ত সর্বময় ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত ছিল। এখানে ভারসাম্য কোনো সভ্য দেশ রাখে না। ভারত ও পাকিস্তানও নয়। বাহাত্তরের ওই বিধান (যা চতুর্থ সংশোধনীতে রহিত হয়) আর ফিরিয়ে না আনতে দুই প্রধান দলের মধ্যে অমিল নেই। অথচ সরকার বলছে, তারা ‘আগের থেকে’ সুপ্রিম কোর্টকে বেশি ক্ষমতা দিয়েছে। আর বিএনপি যে সামরিক ফরমান দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে তথাকথিত পরামর্শের বিধান যুক্ত করেছিল, সেটা তারা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথাও মুখে আনছে না।

তাই ওই টানাপোড়েনের জন্য কোনো ব্যক্তিবিশেষকেই এককভাবে দায়ী করা সমীচীন হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টসহ নাগরিক সমাজকেই জাগ্রত থাকতে হবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা লেখেননি এমন আপিল বিভাগের অন্তত তিন রায়ে বলা আছে, বাহাত্তরের ১১৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনই স্থায়ী সমাধান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *