বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে ব্রিটিশ আদালতের রায়

Slider শিক্ষা

08443e6e2f5ddf32fe11d2262a6ea173-5a276b3ff02a9

 

 

 

 

 

 

ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা ‘টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস’ বা টয়েক কেলেঙ্কারির ভুক্তভোগীদের যুক্তরাজ্যে থেকেই আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন দেশটির আদালত। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের কোর্ট অব আপিল রায় দিয়েছেন, টয়েক কেলেঙ্কারির ভুক্তভোগীরা স্বরাষ্ট্র বিভাগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় আদালতের আশ্রয় চাইতে পারবেন। আইনি আশ্রয়ের সুযোগ না দিয়ে তাঁদের বিতাড়ন করা যাবে না।

এ রায়ের ফলে টয়েক কেলেঙ্কারির ভুক্তভোগী হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী উপকৃত হবেন। বিশেষ করে ভুক্তভোগীদের যাঁরা এখনো যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, তাঁরা নতুন করে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

২০১৪ সাল থেকে টয়েক সনদধারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার আইনি আশ্রয়ের সুযোগ না দিয়ে গণহারে বিতাড়ন করে আসছে যুক্তরাজ্য। বলছে, আগে নিজ দেশে ফেরত যাও, তারপর আপিল।

সরকারের এমন বিতর্কিত নীতিকে কোর্ট অব আপিল অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। বলেন, দেশে ফেরত যাওয়ার পর যদি বিদেশি শিক্ষার্থীরা আপিল করেন, তাহলে তাঁরা আদালতে হাজির হতে পারেন না, নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে পারেন না এবং তাঁদের কাছ থেকে বিচারপ্রক্রিয়ায় উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব চাওয়ারও সুযোগ হয় না। ফলে এ নীতি অন্যায্য।

‘আপিল রাইট’ না থাকায় ভুক্তভোগী শত শত শিক্ষার্থী বিচার বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করেন। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট অব আপিল চারটি আবেদনকে নমুনা হিসেবে গ্রহণ করেন। যার মধ্যে আতাউল্লাহ ফারুক নামের একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আবেদনও আছে। পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত আইনি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল সলিসিটার্স বাংলাদেশি ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে লড়ে।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসিতে প্রচারিত ‘প্যানারমা’ অনুষ্ঠানে দেখানো হয়, ভিসার মেয়াদ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দিতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন। অন্তত তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্রে একজনের পরীক্ষা আরেকজন দিয়ে টয়েক সনদ অর্জনের চিত্র তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এডুকেশন টেস্টিং সার্ভিস (ইটিএস) এই পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এমন ঘটনার পর তদন্ত শেষে ওই বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর দাবি করে, অন্তত ৪৮ হাজার টয়েক সনদ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে টয়েক সনদকে অযোগ্য ঘোষণা করে সরকার।

এরপর যাঁরা ইতিমধ্যে টয়েক সনদ ব্যবহার করে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছেন এবং ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন, তাঁদের সবাইকে গণহারে বিতাড়ন শুরু করে দেশটি। অনেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবী, পারিবারিক ভিসা বা স্থায়ী হয়েছেন; কিন্তু অতীতে কোনো এক সময় টয়েক সনদ ব্যবহার করায় তাঁদের ভিসা বাতিল করে ফেরত পাঠানো হয়। হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও এর শিকার হয়।

আইনজীবীরা এই রায়কে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে বলছেন, প্রত্যেক মানুষের যে আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার রয়েছে, রায়ে সেটিই প্রতিষ্ঠিত হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *