ঠাকুরগাঁওয়ে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

Slider রংপুর

received_1524349947618648

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

আজ ৩ ডিসেম্বর, ঠাকুরগাঁও পাক-হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ এর এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয়। সেই সময় ঠাকুরগাঁও ছিল উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চল দিনাজপুর জেলার একটি মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত।

৭১ এর ২৭ মার্চ পাক বাহিনীর হাতে প্রথম শহীদ হয় রিক্সা চালক মোহাম্মদ আলী। পরদিন ২৮ মার্চ ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি উচ্চারণ করায় শিশু নরেশ চৌহানকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনীর সদস্যরা।

২৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও ইপিআর এর সুবেদার কাজিম উদ্দিন সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে হাবিলদার বদিউজ্জামানের সহায়তায় অস্ত্রাগারে হামলা চালায়। তারা সমস্ত অস্ত্র বাঙ্গালী সেনাদের হাতে তুলে দিয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। তার নির্দেশে পাকিন্তানী সেনা অফিসারদের গুলি করে হত্যা করা হয়। ফলে ব্যাটালিয়ান হেড কোয়ার্টার পুরোপুরি বাঙ্গালীদের দখলে চলে আসে। তখন থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রশাসন পরিচালিত হতে শুরু করে তৎকালিন সংসদ সদস্য আওয়ামী নেতা আলহাজ্ব ফজলুল করিমের নির্দেশে।

হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁওবাসীর দুর্বার এই প্রতিরোধের কারণেই ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত হানাদার বাহিনী প্রবেশ করতে পারেনি ঠাকুরগাঁওয়ের মাটিতে। ১৫ই এপ্রিল ১০টি ট্রাক ও ৮টি জিপে করে মুহুর্মুহু শেল বর্ষণ করতে করতে ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকে পড়ে হানাদার বাহিনী। তবে তেতুলিয়া থানাকে কেন্দ্র করে ১৫০ বর্গমাইলের ১টি মুক্তাঞ্চলকে কেন্দ্র করে গঠিত ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত হয় এবং পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

২৩ এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিঙ্গিয়া, চন্ডিপুর, আলমপুর, বাসুদেবপুর, গৌরিপুর, মিলনপুর, খামারভোপলা, শুকানপুকুরীসহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার বাঙালি নর-নারী ও শিশু ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। তারা জাঠিভাঙ্গা এলাকায় পৌছালে এ দেশীয় দোসরদের সহযোগীতায় সেদিন পাক বাহিনী কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করে।

২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে গেলে তারা পিছু হটে ঠাকুরগাঁওয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে। পাকসেনারা ৩০ নভেম্বর ভুল্লী ব্রিজটি বোমা মেড়ে উড়িয়ে দেয় এবং সালন্দর এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় মাইন পেতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভুল্লী ব্রিজ মেরামত করে ট্যাঙ্ক পারাপারের ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মাইন অপসারণ করলে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে অগ্রসর হয়।

২ ডিসেম্বর রাতে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও সম্মুখ যুদ্ধের পর শত্রুবাহিনী পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে যায়। ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে মিত্রবাহিনী বিজয়ীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে। মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।

উৎসব মূখর পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ রবিবার ঠাকুরগাঁওয়ে পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট যৌথ আয়োজনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক পৌর মেয়র আকবর হোসেন।

পরে র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বদিউদ্দৌজা বদর, জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি সেতারা বেগম প্রমুখ।

র‌্যালিতে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে।

বিকেলে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজন সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় শহীদ মিনার চত্বরে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *