এবার স্থিতিশীলতা চায় নেপাল

Slider সারাবিশ্ব

b6f5e5d358c70dee99c56cced76231b0-5a1a2f3661ab2

 

 

 

 

গত ৯ বছরে প্রধানমন্ত্রী পদে রদবদল হয়েছে ১০ বার। এই অবস্থায় আজ রোববার আবার জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে নেপালের মানুষ। অনেক নতুনের প্রেক্ষাপটে হচ্ছে এবারের ভোট। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রধান দুই জোটে। তবে দেশবাসীর প্রধান চাওয়া স্থিতিশীলতা। তারা এবার একটি স্থিতিশীল সরকার চায়।

নির্বাচনের ঠিক আগের দিন গতকাল শনিবার নেপালের ইংরেজি ভাষার দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট-এর এক কলামে জনপ্রিয় আমেরিকান টেলিভিশন সিরিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘গেম অব থ্রোনস’ বা সিংহাসনজয়ের খেলা। গত ৯ বছরে নেপাল ১০ বারে ৯ জন প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী শাসনে ছিল। কাঠমান্ডুর বিখ্যাত রাজপ্রাসাদের কাছের মুদিদোকানদার বীরেন্দ্র তেওয়ারির প্রধান আশা, এবার নেপালে অন্তত স্থিতিশীলতা আসবে।

নেপালের জাতীয় নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াই করবে দুটি জোট। শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বে নেপাল কংগ্রেস পরিচালিত ‘গণতান্ত্রিক জোট’ বনাম কে পি অলির কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল) এবং পুষ্পকমল দাহালের ওরফে প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব মাওয়িস্ট সেন্টারসহ বাম দলগুলোর মঞ্চ ‘বাম জোটে’র মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নেপালের অন্যতম প্রধান এই দুটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী জোট গঠনের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ অভিন্ন দল গঠনেরও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। উল্লেখ্য, কংগ্রেস ও দুই কমিউনিস্ট পার্টি পালাক্রমে নেপালের ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে।

এ নির্বাচন নেপালে ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে আরেকটি কারণে। নতুন সংবিধানে নেপালকে ফেডারেল, অর্থাৎ সাতটি প্রদেশে বিভক্ত এবং হিন্দু রাষ্ট্র থেকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণার পর এটাই প্রথম নির্বাচন। এবারই প্রথম নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দফায় আজ ৩২টি জেলায় এবং দ্বিতীয় দফায় আগামী ৭ ডিসেম্বর ৪৫টি জেলায় ভোট হবে। নেপালে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫৪ লাখ।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ভোট গ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেই ‘নীরব পর্যায়’ ঘোষণার পর সব রকম রাজনৈতিক সভা ও প্রচার নিষিদ্ধ হলেও পর্যটন এলাকা থামেল এবং জিয়াথা এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালাতে দেখা যায়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন এবং গুজবের বিস্তার ঘটলেও নেপালের অন্যতম প্রধান থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (সিএসএএস) পরিচালক নিশ্চল এন পান্ডে মনে করেন, নির্বাচন এত কাছে চলে এসেছে এবং জনগণের মধ্যে যে বিপুল আশা সৃষ্টি হয়েছে, কেউ চাইলেও এখন আর চক্রান্ত করে নির্বাচন স্থগিত করা সম্ভব নয়।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ার আশা ব্যক্ত করে নিশ্চল পান্ডে বলেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। একই সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন খুবই ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে। প্রার্থীরা বিপুল হারে অর্থ খরচ করছেন। প্রধান সব দলই ধনী ঠিকাদার এবং মাফিয়া ও গুন্ডাদের মনোনয়ন দিয়েছে।

তবে কাঠমান্ডুর পিপলস রিভিউ পত্রিকার সম্পাদক পুষ্প রাজ প্রধান আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, কিছু গন্ডগোল হতে পারে।

থামেল এলাকার ছোট দোকানি সাবিলা খাতুন থেকে শুরু করে দরবার মার্গের অভিজাত বিপণিবিতান বনজ্যুরের দেশীয় প্রধান তরুণ সুরাজ রায়ামাঝির প্রত্যাশা একটাই, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন। সুরাজের ভাষায়, ‘জেলা শহরগুলো উন্নত হলে আমরা ব্যবসা বাড়াতে পারব। নির্বাচনের ফলের দিকে তাই তরুণেরা অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।’ বড় দুটি জোটের বাইরে নতুন দল বিবেক সাঝা দল শহুরে শিক্ষিত তরুণদের অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

সিএসএএসের পরিচালক নিশ্চল পান্ডে এ বিষয়ে বলেন, এ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। প্রথমত বারবার সরকার পরিবর্তনের কারণে ভূমিকম্পের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠায় নির্মাণকাজ শেষ হয়নি, তহবিলও ব্যয় হয়নি। দ্বিতীয়ত, দেশব্যাপী সড়ক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়ন থমকে আছে। অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনৈতিক খাত, উচ্চশিক্ষা ও পর্যটন থেকে আয়ে ক্ষতি হয়েছে।

পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ব্যাপক হারে দুর্নীতির প্রসারের কথা উল্লেখ করে নিশ্চল পান্ডে আরও বলেন, নতুন সরকার যদি এসব থামাতে না পারে, তাহলে গণতন্ত্র পরিহাসে পরিণত হবে।

জাতীয় নির্বাচনে দুই বাম দলের নেতৃত্বাধীন জোটই বিজয়ী হবে বলে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দুটি রাষ্ট্র ভারত ও চীনের মধ্যে নেপালের বাম সরকার কতটা দেশ পরিচালনায় সক্ষম হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন সাংবাদিক পুষ্প রাজ প্রধান। তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্থিতশীলতাই এখন জাতীয় চাওয়া। আমাদের আগে স্থিতিশীল সরকার ছিল না। আমাদের এমন সরকার দরকার, যারা তাদের মেয়াদ শেষ করবে।’

নির্বাচনকালীন সরকারে বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও মাওবাদী বিরোধী দল সরকারে রয়েছে। নেপালের সংবিধান অনুসারে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাঁর অধীন কোনো মন্ত্রীকে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে বরখাস্ত করতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *